সালঙ্করা: গয়না পরানো হচ্ছে প্রতিমাকে। ছিল পুলিশি প্রহরাও। মালোপাড়া বারোয়ারিতে। রবিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
আদালতের নির্দেশ রক্ষা করতে কড়া অবস্থান নিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। জেলা পুলিশের সিদ্ধান্ত, কোনও বারোয়ারিকেই সাং নিয়ে মণ্ডপ থেকে বেরতে দেওয়া হবে না। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সাং বার করার চেষ্টা হলে একাধিক ধারায় মামলা করা হবে এবং তার মধ্যে জামিনঅযোগ্য ধারাও থাকতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে রবিবার রাতেই বেশ কিছু বারোয়ারি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সাং বাদ দিয়ে চাকাগাড়িতে করে প্রতিমা ঘাটে নিয়ে যাবে।
সাঙে চাপিয়ে জগদ্ধাত্রী বিসর্জনের শোভাযাত্রা কৃষ্ণনগরের দীর্ঘদিনের প্রথা। এ বার অতিমারির আবহে ভিড় এড়াতে হাইকোর্ট শোভাযাত্রার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও শহরের বহু বারোয়ারি একযোগে বিরোধিতা শুরু করে। নাগরিকদের মধ্যেও তার প্রবল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সমস্ত বারোয়ারির প্রতিনিধিদের নিয়ে আগেই একাধিক বার বৈঠক করেছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু কোনও ঐকমত্য হয়নি।
রবিবার রবীন্দ্র ভবনে ফের বারোয়ারিগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক পার্থ ঘোষ এবং কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ। শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরাও ছিলেন। কোনও ভাবেই সাং বার করতে দেওয়া হবে না বলে জানানোর পরেই সভায় বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। জেলাশাসকের কথার মধ্যেই কিছু বারোয়ারির প্রতিনিধি আপত্তি জানিয়ে চিৎকার করতে থাকেন। কেউ কেউ সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। পরে জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্যের সময়েও প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশ সভাকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। ভোটের বাক্সে বদলা নেবেন বলেও হুমকি দিতে থাকেন কেউ-কেউ। শেষ সভা ভেস্তে যায়। বেশ কিছু বারোয়ারির প্রতিনিধি বাইরে এসে আধিকারিকদের গাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখান।
পরে ফের বারোয়ারিগুলির কর্মকর্তাদের ডেকে আলাদা করে কথা বলতে শুরু করেন জেলা পুলিশের কর্তারা। কিছুটা কড়া ভাবেই তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। এর পরেই একে-একে সাং বার না করার কথা জানিয়ে দিতে থাকে বারোয়ারিগুলি। রাতে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, প্রতিটি বারোয়ারির উপরে আলাদা ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হবে। সেই মতোই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিগত বছরগুলিতে বিসর্জনের সময়ে প্রায় দেড় হাজার করে পুলিশ থাকত। এ বার সংখ্যাটা আরও বাড়ছে। জেলার বাইরে থেকেও প্রচুর পুলিশ আনা হচ্ছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, “এ বছর সাং সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরেও যদি কেউ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেন, সমস্ত ধরনের কড়া আইনি পদক্ষেপকরা হবে।” এবং এ ক্ষেত্রে শুধু বারোয়ারির পদাধিকারীদের বিরুদ্ধেই নয়, সাধারণ সদস্যদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।