ছবি: সংগৃহীত
ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে সচেতন না হলে এক দিন সব চেষ্টাই জলে যাবে! পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বার বার এ বিষয়ে সাবধান করছেন। কিন্তু হুঁশ কি ফিরেছে?
সম্প্রতি ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট কিন্তু সে কথা বলছে না। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদ জেলার ৪টি ব্লকের অবস্থা বিপজ্জনক (ক্রিটিক্যাল)। অথচ ২০১১ সাল পর্যন্ত জেলার কোনও ব্লকই বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল না। গোটা রাজ্যে ৪২টি ব্লক আংশিক বিপজ্জনক (সেমি ক্রিটিক্যাল)। সেখানে শুধু মুর্শিদাবাদেই সংখ্যাটা ১৩!
তার পরেও এক দিকে অপরিকল্পিত ভাবে মাটির তলা থেকে জল তোলা হচ্ছে। অন্য দিকে সে ভাবে জল রিচার্জও হচ্ছে না। রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় প্রতি বছর ছয় ইঞ্চি করে জলস্তর নামছে। ফলে এখন থেকে সজাগ না হলে বিপদ আরও বাড়বে।
জেলা স্তরে ভূগর্ভস্থ জল উন্নয়ন কমিটির নোডাল অফিসার রাজ্য জল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের মুর্শিদাবাদের ভারপ্রাপ্ত ভূতাত্ত্বিক ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘অপরিকল্পিত ভাবে যাতে জল তোলা না হয় তার জন্য আমরা বাসিন্দাদের সচেতন করছি। বেআইনি ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলার বিরুদ্ধেও লাগাতার অভিযান চালাচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে বাসিন্দাদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। জোর দিতে হবে জল সংরক্ষণেও।’’
রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূগর্ভস্থ জলের ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় সেচে। শিল্প, গৃহস্থালি ও অন্য কাজে ১০ শতাংশ জল ব্যবহৃত হয়। বিপজ্জনক ও আংশিক বিপজ্জনক ব্লকে কৃষিকাজের জন্য জল তুলতে হলে অনুমোদন নিতে হয়। সেফ ব্লকে ‘সেভেন হর্স পাওয়ার’ পর্যন্ত পাম্পে জল তোলার ক্ষেত্রে অনুমোদন লাগে না। আর শিল্পের জন্য ভূগর্ভস্থ থেকে জল তুলতে হলে সর্বত্র অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া গৃহস্থ বাড়ির ক্ষেত্রে ওভারহেড রিজার্ভার ১০ হাজার লিটার পর্যন্ত হলে জল তোলার অনুমোদন নিতে হয় না।
কিন্তু বাস্তবে বহু জায়গায় সেই নিয়ম মানা হয় না বলেই অভিযোগ। সারা জেলায় জল তোলার জন্য কৃষিক্ষেত্রে মাত্র সাত হাজার পাম্প মালিক অনুমোদন নিয়েছেন। নির্দেশ অমান্য করে বাকি পাম্প চলছে বেআইনি ভাবেই।
ব্যাঙের ছাতার মতো জেলার অলি-গলিতে গজিয়ে উঠেছে বেআইনি জল প্রকল্প। মাটির নীচ থেকে জল তুলে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন ওই প্রকল্পের মালিকেরাও। রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের হিসেব অনুযায়ী এ রকম প্রায় তিন হাজার জল প্রকল্প অনুমোদন ছাড়াই চলছে।
রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের এক দিকে রাঢ় অঞ্চল। অন্য দিকটি বাগড়ি। মুর্শিদাবাদের রাঢ় অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলের রিচার্জ জোন হল মালদহ। ওই জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হল, মাটির নীচের জল কী পরিমাণে তোলা হল এবং জল রিচার্জ কেমন হল তার উপরে মুর্শিদাবাদের রাঢ় অঞ্চলের জলস্তর নির্ভর করে।’’
ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বৃষ্টির জলে বাগড়ি এলাকায় রিচার্জ হলেও রাঢ় অঞ্চলে হয় না। রাঢ়ের মাটিতে কাদার আস্তরণ রয়েছে। জল ভূগর্ভে পৌঁছয় না। প্রতি বছর ছয় ইঞ্চি করে জলস্তর নামছে। এই পরিস্থিতিতে সকলে সচেতন না হলে এক দিন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’