চলছে কেবল শব্দ ধাওয়া

ধোঁয়া বিষের হিসেবই নেই

কত ধোঁয়া বিষিয়ে তোলে বায়ুমণ্ডল? আগের বছর এই দু’দিনে কতটা বায়ু দূষণ হয়েছিল? এই বছরে তা বাড়ল না কমল? 

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

খুদে হাতে ফুলঝুরি। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

কত মণ বারুদ পোড়ে কালীপুজোর রাতে? বা দেওয়ালিতে? কত ধোঁয়া বিষিয়ে তোলে বায়ুমণ্ডল?

Advertisement

আগের বছর এই দু’দিনে কতটা বায়ু দূষণ হয়েছিল? এই বছরে তা বাড়ল না কমল?

এ সব নিয়ে সতর্কতা দূরে থাক, মাপার কোনও ব্যবস্থাই নেই গোটা নদিয়া জেলায়। শুধু শব্দবাজি ধরতেই পুলিশ ব্যস্ত। শীতের মুখে এমনিতেই যেখানে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, সেখানে ধোঁয়া কত ভারী করে তুলছে রাতের বাতাস, তা নিয়ে কারই বা মাথাব্যথা?

Advertisement

প্রশাসনের কর্তারাই জানাচ্ছেন, বায়ু দূষণ মাপার ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই জেলায়। ফলে নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ করারও প্রশ্ন ওঠে না। পুলিশি ধড়পাকড়ের ফলে শব্দবাজি পোড়ানো এখন অনেকটাই কমেছে। বিক্রি বেড়েছে রকেট, তুবড়ি, চরকি, রংমশাল জাতীয় আলোর বাজির। তাতে শব্দদূষণ কমেছে বটে, কিন্তু এই সব বাজির ধোঁয়া বোমের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বাড়ছে বায়ু দূষণ।

শক্তিনগর জেলার হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান আমোদ প্রসাদ বলছেন, “এই সময়ে ঠান্ডা পড়তে শুরু করায় বায়ুমণ্ডলের নীচের দিকে বাতাসের ঘনত্ব বেড়ে যায়। ক্ষতিকর উপাদানগুলি নীচের দিকেই বেশি থাকে। ফলে অ্যাজ়মা বা হাঁপানি ছাড়াও ফুসফুসের অন্য সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁদের কষ্ট বাড়ে। হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।”

বাজির ধোঁয়া সেই বাতাসকে আরও ভারী করে তোলে। চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি বিবর্তন ভট্টাচার্য বলছেন, “সকলে শুধু শব্দ নিয়ে ভাবছেন। বায়ু দূষণটা যেন কিছুই না! এ দিকেও কিন্তু সমান গুরুত্ব দেওয়া দরকার।”

পরিবেশবিদেরা বলছেন, যে সব শহরের জনসংখ্যা এক লক্ষের বেশি সেখানে বায়ু দূষণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কলকাতার আশপাশে কল্যাণী থেকে বজবজ ব্যান্ডেল, উলুবেড়িয়া দূষণ বাড়ছে। অথচ এ রকম বেশির ভাগ শহরেই বায়ু দূষণ মাপার পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। কিছু জেলায় দূষণ মাপার যন্ত্র বসানো হলেও, তা যথেষ্ট নয়।

পরিবেশবিদ তথা রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতে, “শুধু জেলার সদর শহরে এই পরিকাঠামো তৈরি করলে হবে না। অন্য শহরগুলিতেও করতে হবে। তা ছাড়া জেলা সদরেও একটা মাত্র যন্ত্র বসালে হবে না, একাধিক না বসালে দূষণের মাত্রা ঠিক বোঝা যাবে না।” রাজ্য সরকার ৩৯টি শহরে যে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্প চালু করেছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওই শহরগুলিতে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মূল উদ্দেশ্য সফল হবে না। কসমেটিক উন্নয়ন হবে।” চিকিৎসক আমোদ প্রসাদও মনে করেন, “জেলাস্তরে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি।”

মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র দাবি করেন, “আমরা গোটা রাজ্যে বায়ু দূষণ মাপার জন্য ৭৭টি স্টেশন তৈরি করেছি। খোঁজ নিয়ে দেখুন!” নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার কিন্তু বলছেন, “এই জেলায় বায়ু দূষণ পরিমাপের পরিকাঠামো নেই। জেলা পুলিশেরও তেমন পরিকাঠামো বা বিশেষজ্ঞ নেই।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যদি জেলাতেও বায়ু দূষণ পরিমাপের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে, ভাল হয়। আমরা তা হলে সেই মতো পদক্ষেপ করতে পারব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement