Footpath

পথে দোকান, চলতে নাকাল পথচারীরা

গোদের উপরে বিষফোঁড়া, গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট ‘পার্কিং জ়োন’ না থাকা।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:৫৩
Share:

ফুটপাথ দখল করে দোকান। কৃষ্ণনগরের হাইস্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

পোস্ট অফিসের মোড়ে বাঁকটা ঘুরতেই উল্টো দিক দিয়ে আসা একটি স্কুটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দিয়ে বসল বছর ষাটেকের এক বৃদ্ধকে। তিনি ছিটকে পড়লেন ফুটপাথের রেলিংয়ের গায়ে। হাতের থলে ছিটকে পড়ল রাস্তায়। ছড়িয়ে পড়ল আনাজ।

Advertisement

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই দৃশ্য কিন্তু নতুন নয়, বরং কৃষ্ণনাগরিকদের প্রায় চোখ-সওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন আর নতুন করে কেউ অবাক হন না। তাঁরা জানেন, প্রতিবাদ করেও লাভ নেই। কারণ বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাত কোনও দিনই আর ফাঁকা হবে না। পথচারীদের হাঁটতে হবে রাস্তা দিয়ে। ধাক্কা খেতে হবে বাইক-স্কুটির, ধাক্কা খেতে হবে টোটোর।

পুরবাসীর আক্ষেপ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, প্রশাসনের চোখ বুজে থাকার কারণেই শহরের রাস্তার দুই ধার ক্রমশ দখল হয়ে যাচ্ছে। তাতে সঙ্কীর্ণ রাস্তা আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে আর ফুটপাত পরিণত হচ্ছে স্থায়ী দোকানে। দোকানের পসরা এগোতে এগোতে ফুটপাত অতিক্রম করে প্রায় রাস্তার উপরে এসে পড়েছে। কোথাও ফুটপাতের উপরেই নানা সামগ্রী ছড়িয়ে, কোথাও আবার মাথার উপরে টাঙানো হয়েছে ত্রিপলের ছাউনি। কোথাও রাস্তার পাশে পসরা সাজিয়ে বসে আছে চপ, ফুচকা, মোমো, ফুল, ঘুগনির দোকান।

Advertisement

গোদের উপরে বিষফোঁড়া, গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট ‘পার্কিং জ়োন’ না থাকা। গাড়ি, মোটরবাইক ও সাইকেল দাঁড় করিয়ে রাখা হয় দোকানের সামনে রাস্তার উপরেই। ফলে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা এই শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তায় চলাফেরা করাই দায় হয়ে ওঠে। লেগে থাকে নিত্য দুর্ঘটনা।

কৃষ্ণনগর শহরে এমনিই দিনদিন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। নিত্য যানজটে জেরবার শহরবাসী। যানজট সামাল দিতে রোজ কালঘাম ছুটে যায় ট্র্যাফিক পুলিশের। এ দিকে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীদের সেই যানজটের ভিতর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। তাতেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। ১৯,২০ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতরে চ্যালেঞ্জ মোড় থেকে ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়া পুরসভার মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে ফুটপাত কবেই দখল হয়ে গিয়েছে। আবার ১৪ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝখানে মল্লিকমাঠ থেকে নেদেরপাড়া মোড় হয়ে ১৫, ১৬ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতর দিয়ে বৌবাজার, ক্ষৌণীশ পার্ক হয়ে বেলেডাঙা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দোকান ক্রমশ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু এই সব এলাকায় কোথাও কোনও ‘কার পার্কিং জ়োন’ নেই।

দিন কয়েক আগে বছর সাতেকের সন্তানের হাত ধরে চ্যালেঞ্জ মোড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন শহরেরই বাসিন্দা এক মহিলা। ফুটপাত বেদখল হয়ে থাকায় তাঁদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। আচমকা পিছন দিক থেকে একটি মোটরবাইক এসে মহিলাকে ধাক্কা মারে। গুরুতর আঘাত না লাগেনি, এই বাঁচোয়া। ক্ষুব্ধ ওই মহিলার কথায়, “ফুটপাত দিয়ে যে হাঁটব, তার উপায় আছে? সবটাই দখল করে রেখেছে। পুরসভা বা প্রশাসন যে কী করতে আছে, সেটাই বুঝি না।”

পুরসভা যে একেবারেই কোনও পদক্ষেপ করেনি, তা-ও নয়। বছর কয়েক আগে পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানে নেমেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার মোড় থেকে চ্যালেঞ্জ মোড় পর্যন্ত অভিযান চলে। বেশ কিছু দোকানের সামনে অস্থায়ী নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু বাদ সাধেন কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদার। ‘মানবিক’ কারণে আপত্তি তোলেন এই উচ্ছ্বেদ অভিযান নিয়ে। দাবি করেন, বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাবে না। সে দিন তৃণমূল বিধায়ক ও তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পুরসভার মধ্যে সংঘাত অবধারিত হয়ে উঠেছিল। তা এড়াতে শেষ পর্যন্ত অভিযান বন্ধ করে দেয় পুরসভা।

আর সেই সুযোগ নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয় দোকানের পসরা ফুটপাতের উপরে সাজিয়ে রাখা থেকে রাস্তার পাশে স্টল দেওয়া। যত দিন গিয়েছে, তা ক্রমশ বেড়েছে। পরিস্থিতি যে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে তা এখন স্বীকারও করছেন পুরকর্তারাও।

কিন্তু তার পর? বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? কখন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement