Krishakbandhu

‘কৃষকবন্ধু’ হতে চাষির স্ব-ঘোষণাই যথেষ্ট

ভোটের মুখে বাংলার চাষিদের মন পেতে এ বার সব চাষিকে ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পের’ সুবিধা দিতে উদ্যোগী হল কৃষি দফতর।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন চাষিরা। নৈতিক ভাবে চাষিদের আন্দোলনকে সমর্থনও করছে তৃণমূল। ভোটের মুখে বাংলার চাষিদের মন পেতে এ বার তাই সব চাষিকে ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পের’ সুবিধা দিতে উদ্যোগী হল কৃষি দফতর। এতদিন জমির রেকর্ড বা যথাযথ নথি না থাকলে এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারতেন না চাষিরা। এ বার সেই বিষয়টিকেও সরলীকরণ করা হয়েছে। যদিও রাজ্য সরকারের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিজেপি’র দাবি, সামনের ভোটে হার নিশ্চিত বুঝেই তৃণমূল এখন ‘কৃষক তোষণ’ করছে। তৃণমূল কিসান খেত মজদুর কমিটির জেলা সভাপতি আব্দুল মতিনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিল্লিতে কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যে আন্দোলন করছেন, তা নিয়ে বিজেপি’র মাথাব্যথা নেই। আর বাংলায় কৃষকদের উন্নয়ন দেখে বিজেপি’র গাত্রদাহ হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, এই প্রকল্প নতুন নয়। আগে নিয়মের গেরোয় সব কৃষক এই সুবিধা পেতেন না। এখন সকলেই যাতে এই সুবিধা পান, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পের’ সুবিধা পেতে কৃষকের চাষ জমির রেকর্ড থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এ বার চাষ জমির রেকর্ড না থাকলেও কৃষক স্বঘোষিত ঘোষণাপত্র দিয়ে ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পে’ সুবিধা পাবেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যের কৃষি দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব জেলায় জেলায় সেই নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। ফলে এত দিন যাঁরা চাষ জমির রেকর্ডের অভাবে ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পে’ আবেদন করতে পারছিলেন না তাঁদের সমস্যা দূর হবে। মুর্শিদাবাদের কৃষি দফতরের আধিকারিকদের দাবি, এই প্রকল্পে আবেদনের সরলীকরণের ফলে জেলার লক্ষাধিক কৃষকের উপকার হবে। মুর্শিদাবাদের উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘এত দিন কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আবেদন করতে হলে কৃষকের নামে জমির রেকর্ড থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। নানা কারণে অনেকের নামে জমির রেকর্ড না থাকায় তাঁরা আবেদন করতে পারছিলেন না। এ বার জমির রেকর্ড না থাকলেও ওই ঘোষণাপত্র দিয়ে আবেদন করা যাবে।’’

জেলা কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদে ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রাজ্যের সরকার ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’ এনেছে। এই প্রকল্পে একজন কৃষক প্রতি বছর সর্বোচ্চ এক একর জমির জন্য ৫ হাজার টাকা অনুদান পাবেন। সর্বনিম্ন বছরে ২ হাজার টাকা অনুদান পাবেন। প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। কৃষি দফতরের দাবি, ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে দু’দফায় ২১ হাজার চাষি ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্পে’র জন্য আবেদন করেছেন। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, আরও দু’লক্ষেরও বেশি কৃষক এই প্রকল্পের বাইরে থেকে গিয়েছেন। তাঁদের প্রকল্পের আওতায় আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রকল্পের বাইরের যাঁরা আছেন তাঁরা সকলে তো জমির রেকর্ডের জন্য আবেদন করতে পারেননি এমন নয়। কিছু কৃষক নিজে থেকে এগিয়ে আসেনি, এমন নজিরও রয়েছে। আমাদের ধারণা, আবেদনের সরলীকরণের জন্য লক্ষাধিক কৃষকের সুবিধা হবে।’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পেতে বাধ্যতামূলক ছিল ভোটার কার্ড, জমির রেকর্ড, ব্যাঙ্কের পাশ বই, ফোন নম্বর। সঙ্গে আধারকার্ড থাকলে তা-ও জমা দিতে হত। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির অনেকের রেকর্ড নেই, অনেকে আবার রেকর্ডের জন্য আবেদন করেননি। এ ছাড়া অন্য কারণেও অনেক চাষির জমির রেকর্ড নেই। ফলে তাঁরা কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আবেদন করতে পারছিলেন না। এবার রেকর্ডের পরিবর্তে স্ব-ঘোষণাপত্র দিতে হবে। সেই স্ব-ঘোষণাপত্রের সঙ্গে জমির দলিল, পিট দলিল কিংবা জমির রেকর্ডের জন্য আবেদনের রিসিট কপি দিলে তবেই আবেদন গৃহীত হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement