রোদ উঠতেই খেতে পড়ে থাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। হরিহরপাড়ার গোপালনগরে। ছবিঃ মফিদুল ইসলাম।
হেমন্তের বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে চাষে। খেতে পড়ে থাকা কাটা ধান, সর্ষে, আলু, মুসুর, পেঁয়াজ-সহ রবি ফসলে ক্ষতির মেঘ চওড়া হচ্ছে। চাষিদের একাংশের দাবি, ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শীতকালীন আনাজেও। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণ পেতে বিমার আবেদনের দিকে ঝুঁকছেন অনেক চাষি।
গত বুধবার জেলায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৩ মিলিমিটার। শুক্রবার সকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হয়েছে। গত দু’দিন ধরে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া। তবে কৃষি আধিকারিকদের দাবি, জেলায় যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে চাষের খুব বেশি ক্ষতি হবে না।
তবে কৃষকেরা অন্য কথাই বলছেন। হরিহরপাড়ার চাষি সাবির বিশ্বাস বলেন, ‘‘অকালবৃষ্টির ফলে আগাম লাগানো সর্ষে খেতে ধ্বসা রোগ শুরু হয়েছে। আনাজে রোগ-পোকার আক্রমণও বেড়েছে।’’ চাষিদের একাংশের দাবি, অকালবৃষ্টির ফলে অধিকাংশ ফসলেরই ক্ষতি হবে। সেক্ষেত্রে ফসল বিমার উপর জোর দিয়েছে কৃষি দফতর।
ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রবি মরসুমে দশটি ফসলের বিমার জন্য আবেদনপত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ওই তালিকায় রয়েছে বোরো ধান, সর্ষে, মুসুর, গম, আলু। বোরো ধানের জন্য বিমার আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি। বাকি ফসলের বিমার জন্য আবেদনের শেষ দিন চলতি মাসের ৩১ তারিখ। গত খারিফ মরসুমে জেলার প্রায় পাঁচ লক্ষ ২৫ হাজার চাষি বিমার জন্য আবেদন করেছেন। গত রবি মরসুমে প্রায় সাত লক্ষ ৫৪ হাজার চাষি বিমার জন্য আবেদন করেছিলেন। অনেক চাষি বিমার ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন। আলু, আখের ক্ষেত্রে বিমার কিস্তির ৪.৮৫ শতাংশ টাকা চাষিকে দিতে হলেও বাকি আটটি ফসলের বিমার কিস্তির টাকা দেবে রাজ্য সরকার। অধিক সংখ্যক চাষি যাতে বিমার আওতায় আসেন, সে জন্য চাষিদের সচেতন করতে প্রচারও শুরু করেছে কৃষি দফতর।
জেলার কৃষি কর্তা মোহনলাল কুমার বলেন, ‘‘রবি মরসুমে বিমার আবেদনের কাজ সবে শুরু হয়েছে। আমরা বিমা করানোর উপর জোর দিয়েছি। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’
অন্যদিকে, অকালবৃষ্টি, কুয়াশাচ্ছন্ন, মেঘলা আবহাওয়ায় বিভিন্ন ফসল, মরসুমি আনাজের রোগ-পোকার আক্রমণ বাড়তে পারে বলে মত কৃষি বিশেষজ্ঞদের। সেক্ষেত্রে, সুপারিশমতো কীটনাশক, ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতেই অনেক চাষি খেতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন।
জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মোহনলাল কুমার জানান, জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরের কৃষি আধিকারিকেরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে মাঠে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ ধান চাষির ঘরে উঠে গিয়েছে। বেশ কিছু খেতে ধান কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেগুলিতেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। গম, দেরিতে বোনা সর্ষের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি সেচের কাজ করবে।’’