প্রতীকী ছবি।
করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে নিম্ন চাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের জোড়াফলা। শনিবার কলকাতার আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর থেকে এ নিয়ে একটি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
ওই সতর্কবার্তায় কৃষকদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তার সন্নিহিত দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছিল। সেটি আরও ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে নিম্ন চাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এই নিম্নচাপ তীব্র থেকে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আকারে ১৯ বা ২০ মে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই সময় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মাঝারি থেকে ভারী বা অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
এই সতর্কবার্তা ঘিরে জেলার কৃষক এবং ফল-ফুল চাষিদের দুর্ভাবনা শুরু হয়েছে। চাষিরা জানান, এখন মাঠ ভরা ফসল। এক দিকে চলছে বোরো ধান কাটার মরসুম। অন্য দিকে মাঠ ভরা পাট, যা নদিয়ার অন্যতম অর্থকরী ফসল। এছাড়া আম, লিচু, কলা এবং মরসুমি আনাজে ভর্তি ক্ষেত। এই অবস্থায় ঘণ্টায় ১০০ বা তার বেশি গতিবেগে ঝড় এবং অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা স্বভাবতই কপালে ভাঁজ ফেলেছে চাষিদের।
বড় আন্দুলিয়ার কৃষক রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “এই সময় জোরালো ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা জমির পাটের। বোরো ধানের বেশির ভাগই কাটা হয়ে গিয়েছে। খুব বেশি হলে কুড়ি থেকে পঁচিশ শতাংশ ধান মাঠে আছে। আনাজের মধ্যে শশা, পটল, ঝিঙের মতো মাচার যাবতীয় ফসল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, শিলাবৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, কলাবাগান শেষ হয়ে যাবে। জমিতে জল দাঁড়ালে পাটগাছে পচন ধরতে পারে। সব মিলিয়ে এখন বড়সড় ঝড়-বৃষ্টি মানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দেওয়া হবে।
অন্য দিকে, ঝড়ের আশঙ্কায় ভুগছেন কলা, আম, লিচু বাগানের মালিকেরা। জেলার এক ফলচাষি দুর্গা তিওয়ারি বলেন, “সবে লিচু অল্প করে পাড়া হচ্ছে। আম এখন মাঝপথে। কিন্তু এখন ঝড় হলে সবচেয়ে যে ক্ষতির ভয় পাচ্ছি, তা হল গাছ ভাঙার। কারণ, আমগাছের ডাল এখন ফলের ভারে এমনিতেই নুইয়ে আছে। এই সময় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় এলে আর দেখতে হবে না।’’ তিনি জানান, যদি শিলাবৃষ্টি হয় তাহলেও আম লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। একই আশঙ্কা কলাচাষিদের মধ্যেও। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, জোরালো ঝড় হলে বাগানের পর বাগান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এই অবস্থায় দক্ষিণবঙ্গের কৃষকদের কয়েকটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দফতর। বলা হয়েছে, মাঠের পাকা বোরো ধান কাটার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। তৈলবীজ যেমন, বাদাম, ডালশস্য কেটে সুরক্ষিত জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পাট ও তিলের জমি থেকে বৃষ্টির জমে যাওয়া জল দ্রুত বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। যাবতীয় আনাজ ও অন্যান্য ফল বিশেষ করে পেঁপে, কলা জাতীয় ফসল যেগুলোর ঝড়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেগুলি যাতে সহজে ভেঙে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শসা, পটলের মাচা, পানের বরজ শক্ত করে বাঁধার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। সর্বোপরি সমস্ত কাজ করার সময় করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে নদিয়া সহ কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “এই ঝড়ে বোরো ধান নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, বেশির ভাগ ধানই কাটা হয়ে গিয়েছে। আশঙ্কা কলাগাছ নিয়ে। যে সব জমি নিচু, সেখানে জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।”