জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়েছেন পাট চাষিরা। ফাইল চিত্র।
কথায় আছে আশায় খাটে চাষা। কোনও বছর পাট চাষ করে কিছুটা লাভ হয়, কোনও বছর আবার পাট চাষের খরচই ওঠে না। তবুও বছর বছর পাট চাষ করেন কৃষকেরা। গত বছর পাটের উৎপাদনের পাশাপাশি দামও ভাল ছিল। আর এ বারে সেই আশায় মুর্শিদাবাদের চাষিরা গত বারের থেকে বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব, পাটের দামও কম। আর এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়েছেন পাট চাষিরা।
কৃষকরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাটের যে দাম বেঁধে দিয়েছে, তা লাভজনক নয়। কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া দামের থেকে এখন খোলা বাজারে পাটের দাম বেশি ঠিকই। কিন্তু গত বছরের তুলনায় খোলাবাজারে পাটের দাম অনেক কম। যার জেরে এ বারে মুর্শিদাবাদের পাট চাষিদের মুখ ভার। তবে জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (জেসিআই) কর্তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বারে সহায়ক মূল্য বেড়েছে কুইন্ট্যাল পিছু ২৭৫ টাকা। আর পাটের সহায়ক মূল্য বেঁধে দেওয়ার ফলে খোলা বাজারে পাটের দাম বেশি রয়েছে। এটাই জেসিআইয়ের সাফল্য।
সংস্থার বহরমপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার রাজেন্দ্রকুমার দাস বলেন, ‘‘সহায়ক মূল্যের থেকে খোলা বাজারে পাটের দাম বেশি। তাই লোকজন আমাদের ক্রয় কেন্দ্রে আসছেন না। এটা কৃষকদের পক্ষে ভাল। আর এটা সম্ভব হয়েছে পাটের ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়ার জন্য। জেলা জুড়ে পাট ক্রয় কেন্দ্র আমরা খুলে রেখেছি।’’ জেলায় জেসিআই-এর ১৫টি পাট ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
ডোমকলের পাট ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে কুইন্ট্যাল প্রতি খোলা বাজারে পাটের দাম ছিল ৭ হাজার টাকার উপরে। এখন সেই পাটের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছ’হাজার টাকা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ বারে এমনিতেই পাটের উৎপাদন কম, তার উপরে বাজার দরও ভাল না। ফলে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী সকলেরই ক্ষতি হচ্ছে।’’
জেলার পাট চাষিরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে (২০২১ সাল বাদে) পাট চাষ করে খরচ ওঠেনি। গত কয়েক বছরের মধ্যে শুধু গত বছর পাটের দাম ও উৎপাদন ভাল হয়েছিল। গত বছর পাটের দাম কুইন্ট্যাল প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। যার জেরে এ বারে কৃষকেরা আশায় পাট চাষ করেছিলেন।
ফলে ১ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর থেকে বেড়ে জেলায় পাট চাষের এলাকা হয়েছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ২৫০ হেক্টর হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির ঘাটতি কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।