চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
পর্যাপ্ত জমি না মেলায় সুতির সীমান্তে ফেন্সিং তৈরির কাজ আটকে রয়েছে। তাই চাষিদের নিয়ে বৈঠক করলেন ব্লক প্রশাসন ও বিএসএফ আধিকারিকরা। বৈঠকে ডাকা হয় নুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদেরও, যাতে তাঁরাও স্থানীয় চাষিদের সীমান্তে ফেন্সিং তৈরির জন্য জমি দিতে রাজি করাতে তৎপর হন।
এ পর্যন্ত সুতি ১ ব্লকে ২১.৬৮ শতাংশ চাষি তাঁদের জমি দিতে রাজি হয়েছেন। বাকি চাষিদের রাজি করাতেই এই বৈঠক বসে শনিবার আহিরণে সুতি ১ ব্লক অফিসে।
মুর্শিদাবাদে ১২৫.৩৫ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত পথ রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। এর মধ্যে ৪২.৩৫ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত। বাকিটা জলপথ। মোট ৯টি শমসেরগঞ্জ, সুতি ২, সুতি ১, রঘুনাথগঞ্জ ২, লালগোলা, ভগবানগোলা ১ ও ২, রানিনগর ২ ও জলঙ্গি ব্লকের অধীনে পড়ছে এই সীমান্ত এলাকা। এর মধ্যে ৪৪ একর জমি লাগবে সুতি ১ ব্লকেই। এই জমির মালিকানা রয়েছে ১৮৯৫ জন চাষির, যা অন্য কোনও ব্লকে নেই। এই বিপুল সংখ্যক চাষিকে রাজি করিয়ে জমি কিনতে সমস্যায় পড়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
শুধু এই ব্লকেই নয়, একই সমস্যা কমবেশি অন্যান্য ব্লকেও। তবে সেখানে চাষির সংখ্যা অনেক কম।
গত ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা রাজ্য সরকারের মুর্শিদাবাদ সহ সীমান্তবর্তী জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতায়। সেখানে সীমান্তে ফেন্সিং দিতে জমি অধিগ্রহণে তৎপর হতে নির্দেশ দেন। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব ছাড়াও ছিলেন জেলার পুলিশ সুপাররাও। সেই সূত্রেই সুতি ১ ব্লকের এই জমি বৈঠক।
সুতি ১ ব্লকের নুরপুরের ৮৫ ও ৮৬ জে এল নম্বরে ৪৪ একর জমির মালিক ১৮৯৫ জন, যাঁদের জমি নিতে হবে সীমান্তে ফেন্সিং তৈরির জন্য। এ পর্যন্ত মাত্র ৪১১ জন চাষির কাছ থেকে জমি দেওয়ার লিখিত সম্মতি মিলেছে। এখনও জমি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেননি ১৪৮৪ জন। অর্থাৎ প্রায় ৭৯ শতাংশ চাষির সম্মতি মেলেনি।
সুতি ১ ব্লকের বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক জানান, যাঁরা এখনও সম্মতি দেননি তাঁদের বুঝিয়ে জমি দিতে রাজি করানোর চেষ্টা করতেই এই বৈঠক। সীমান্তে কাঁটাতারের প্রয়োজনীয়তা এবং তা যে কতটা জরুরি সে সম্পর্কে চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চাষি রয়েছে এই ব্লকে যাঁদের জমি সীমান্তে ফেন্সিং গড়তে প্রয়োজন। তাই এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা জরুরি। এ নিয়ে পরবর্তীতেও আবার বৈঠক হবে চাষিদের সঙ্গে।
প্রয়োজনীয় জমির সবটাই অবশ্য চাষযোগ্য নয়। পতিত, খালি জমিও পড়ে রয়েছে এর মধ্যে, যা ফেন্সিংয়ের জন্য নেওয়া হবে।
স্থানীয় চাষিদের মতে, সীমান্তে চরের এই জমি অত্যন্ত উর্বর। আনাজ চাষ হয় ব্যাপক পরিমাণে, তাই জমির দাম এখন অনেক বেড়েছে। আগেও সীমান্তে সড়ক করতে জমি দেওয়া হয়েছে। এখন সেই দামে জমি দেওয়া সম্ভব নয়।
তা ছাড়া, এই এলাকার ৪৪ একর জমির পরিমাণটা কম নয়। চাষিরা চাষবাসের অনেকটাই ক্ষতি হবে বলে তাঁদের দাবি।