খেতের ফসল বাঁচাতে জলসেচ। হরিহরপাড়ার দস্তুরপাড়ায়। ছবি: মফিদুল ইসলাম।
প্রখর রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা চাষের খেত। খেতের ফসল বাঁচাতে হিমসিম খাচ্ছেন চাষিরা। স্বভাবতই বাড়ছে চাষের খরচ।
বৈশাখের প্রথম থেকেই বেড়েছে তাপমাত্রা। গত কয়েক দিন ধরে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রির আশপাশে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা প্রায় একই থাকবে। আগামী কয়েক দিনে নেই বৃষ্টির পূর্বাভাস।
এ দিকে, প্রখর রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে মাটি। পাট, তিল, মরসুমি আনাজের খেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ফসল বাঁচাতে চাষিদের ভরসা পাম্পসেট চালিয়ে জলসেচ দেওয়া।হরিহরপাড়ার মালোপাড়া এলাকার চাষি সাবির বিশ্বাস এ বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা খেতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “ বৃষ্টি নেই। রোদের তাপে খেতের মাটি শুকিয়ে গিয়েছে। মাটি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে খেতে নিড়ানি দেওয়া যাচ্ছে না। পাটের চারাগাছের ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’বার সেচ দিয়েছি। তার পরে পাটের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছি।”
চাষিদের একাংশের দাবি, পাট, তিল, কলা, মরসুমি আনাজের খেতে জলসেচের কোনও বিকল্প নেই। এক বিঘা খেতে জলসেচ দিতে আট থেকে দশ ঘণ্টা সময় লাগছে। এক বিঘা খেতে জলসেচ দিতে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে দাবি চাষিদের একাংশের।
নওদার এক চাষি নৃপেণ মণ্ডল বলেন, “প্রায় ৯৩ টাকা লিটার ডিজ়েল। এক বিঘা খেতে জলসেচ দিতে আগে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগলেও এখন দশ থেকে বারো ঘণ্টা পাম্পসেট চালাতে হচ্ছে। সেচের যা খরচ তাতে ফসল বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে।” অনেক চাষি খেতে ঠিক মতো জলসেচ দিতে পারেননি। ফলে খেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা খেতের পাট, তিল সহ অন্য ফসল। খেতে বোরো ধানে শিষ প্রায় পরিণত হওয়ার মুখে। ধান বাঁচাতে প্রায় প্রতিদিনই খেতে জলসেচ দিচ্ছেন চাষিরা। কলা, আনাজ খেতেও নিয়মিত জলসেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।
অন্য দিকে, রোদের তাপে ঝলসে যাচ্ছে করলা, শশা, লঙ্কা, বেগুনের মতো আনাজ খেত। চাষিদের দাবি, এই আবহাওয়ায় আনাজের ফল, ফুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। রোগ পোকার আক্রমণও দেখা দিয়েছে। ফলে ফলন কমছে।
সারগাছি ধান্যগঙ্গা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যানপালন দফতরের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ চন্দা সাহা পারিয়া বলেন, “এই আবহাওয়ায় ফসল বাঁচাতে খেতে জীবনদায়ী জলসেচ দেওয়া জরুরি।” সকালে অথবা বেলা গড়ালে খেতে জলসেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।