কামিরুদ্দিনের পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিশ্রুতি ছিল, আংশিক মিলেও ছিল। কিন্তু সব আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ল যেন। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ছাড়ায় এমনই মনে করছে বাহালনগর।
জঙ্গি-গুলিতে কাশ্মীরের আপেল বাগানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বাহালনগরের ছ’টি পরিবার বড় বেশি আশায় বুক বেঁধেছিল, সরকারি চাকরি পাওয়া নিয়ে। বছরখানেক আগের সেই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদের এই হদ্দ গ্রামে এসে অনুদানের আশ্বাস দিয়ে গেলেও সরকারি চাকরির কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। দিয়েছিলেন শুভেন্দু। নবান্নকে টপকেই পরিবহণ দফতরে চার নিহতের পরিবারের নিকটজনের চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন তিনি। কথা ছিল বাকি দু’টি পরিবারেরও কারও কোথাও না কোথাও সরকারি চাকরি হবে। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও তা হয়নি। শুভেন্দুর মন্ত্রিত্বে পদত্যাগে সেই আশায় তাই জল পড়ে গেল বলেই মনে করছেন তাঁরা। সেই জঙ্গি হানার আতঙ্ক কাটিয়ে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে বাহালনগর। অন্য সময় শীতে কাশ্মীরে যেতেন গ্রামের শ’তিনেক মানুষ, আপেল বাগানের কাজে। এ বারে গিয়েছেন জনা চারেক।
কাশ্মীরের কুলগ্রামে আপেল বাগানে কাজে যাওয়া গ্রামেরই ৫ জন শ্রমিককে গুলি করে মারে সন্ত্রাসবাদীরা গত বছরের ২৯ অক্টোবর। কোনওক্রমে বাঁচলেও দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখনও আতঙ্কের জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন জহিরুদ্দিন। ৬টির মধ্যে ৪টি পরিবারের অস্থায়ী চাকরি জুটলেও এখনও বিড়ি বেঁধে চলছে কামিরুদ্দিন শেখ ও রাফিকুল শেখের পরিবারের।
দুর্ঘটনার পর বাহালনগরে এসে নিহত কামিরুদ্দিন শেখের বাড়ির উঠোনে খাটিয়াই বসেই মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেছিলেন হতদরিদ্র পরিবারগুলির সঙ্গে। সেই উঠোনে দাঁড়িয়েই কামিরুদ্দিনের স্ত্রী রওশেনারা বেওয়া বলছেন, “চাকরি দিতে পারব না জানালেও গ্রামে এসে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ডেকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, আমার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার যেন ত্রুটি না হয়।’’ কিন্তু অভিযোগ, কথা রাখেনি প্রশাসন। রহিমা এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে।
চাকরি জোটেনি রাফিকুল শেখের স্ত্রী মাবেয়া বেওয়ার-ও। ৫ ও ২ বছরের দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে সাহায্যের টাকা তুলেই চলছে তার সংসার। মাবেয়া বলছেন, “মাথার ওপর কেউ নেই। দিনমজুরি করব সে ক্ষমতাও নেই। তাই চাকরির ভরসাতেই ছিলাম। অভিভাবক বলতে তো আর কেউ নেই। শুভেন্দুবাবুও মন্ত্রী নেই, আর কাকে ভরসা করব ?” আহত জহিরুদ্দিনের মা আতিয়ারা বিবি বলছেন, “ছেলের চিকিৎসা থেকে চাকরি, সবেতেই যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, তা কখনও ভোলা যায়!’’ তাঁর ছেলে জঙ্গিপুরে সেচ দফতরে ১২ হাজার টাকার মাস মাইনের চাকরি করছেন। চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর। নিহত নইমুদ্দিন শেখের ছেলে লালচাঁদ উচ্চমাধ্যমিক পাশ। চাকরি পেয়েছেন জঙ্গিপুরের পরিবহণ দফতরে। ১২ হাজারের চাকরিতে হাতে পান ১০,৪০০ টাকা। মা আবেদা বেওয়া বলছেন, “মন্ত্রী এক মাসের মধ্যে পরিবহণ দফতরে ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।’’ নিহত মুরসালিমের স্ত্রী সায়েরা বিবি বলছেন, “কলকাতায় ডেকে এক মাসের মধ্যে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছিল পরিবহণ দফতর।’’