প্রতীকী ছবি।
রাত ১১ টা।
জানলার ও পারের ফ্ল্যাটগুলোর কয়েকটায় আলো জ্বলছে। বাকি নিভে গিয়েছে আর পাঁচটা দিনের মতোই।
ভোটগণনার দিন তো কী? আমার শহর কৃষ্ণনগরের মতো উন্মাদনা নেই, উৎসব নেই, বাজি-পটকা নেই। টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া বোঝার উপায় নেই যে ভোট চলছে। গত ৫ অক্টোবর থেকে ভোট চলছিল, যা শেষ হল নভেম্বরের ৩ তারিখ। জনসংখ্যা কম, এক মাস ধরে ভোট প্রক্রিয়া চলায় ভোটকেন্দ্রে লাইন নেই। কোভিড পরিস্থিতিতে পোস্টাল ব্যালটে আগাম ভোট দিয়েছেন বহু মানুষ। এখানে আমাদের দেশের মতো ভোটের দিনে ছুটি থাকে না। শুধু ৩ তারিখ আমেরিকান সংস্থাগুলোয় ছুটি।
ছোট থেকে নিজের দেশে দেখে এসেছি ভোটের আগে গাড়ি ছুটিয়ে ধুলো উড়িয়ে নেতা, মন্ত্রী, সেলিব্রিটিরা আসেন। দলে-দলে লোক মিটিং মিছিল জনসভা করে। এখানে এ সব কিছুই তেমন চোখে পড়েনি। এর মধ্যে এক দিন বেড়াতে গিয়ে ওকডেল নামে একটা ছোট শহরে দেখলাম, কয়েক জন একটা হুড খোলা জিপে ট্রাম্পের মুখোশ পরে দলীয় পতাকা উড়িয়ে, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ স্লোগান তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশ মনে আছে, ছোটবেলায় ভোটের পরে দড়িতে ঝোলানো বিভিন্ন দলের পতাকা খুলে জমানো আমাদের খেলা ছিল। এখানে কিন্তু রাস্তায়-রাস্তায় দলীয় পতাকা, মোড়ে মোড়ে ফ্লেক্স নেই, কিচ্ছু নেই।
আমি যে রাজ্যে থাকি, সেই ক্যালিফর্নিয়ায় বরাবর ডেমোক্র্যাটরা শক্তিশালী বলে হয়তো এখানে তেমন প্রচার নিয়ে উন্মাদনা দেখলাম না। তবে লোকের ভীষণ উৎসাহ টিভিতে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’ নিয়ে।
আমাদের মতো প্রবাসীদের কাছে ভোট মানে আলোচনার প্রধান বিষয়, নতুন সরকার ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে কী মনোভাব দেখাবে। তবে আরও কিছু আছে। যেমন কিছু দিন আগে যে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন হয়েছিল, তা সকলকেই কম-বেশি নাড়া দিয়েছে। তা প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনৈতিক না-হলেও তার অভিঘাত এই ভোটে পড়তে বাধ্য। জয়ী দল তথা প্রেসিডেন্টের হাতে আমেরিকা আরও ‘গ্রেট’ হয়ে উঠুক, এটুকুই চাইব।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সান্তা ক্লারা কাউন্টি, ক্যালিফর্নিয়া