Homeless Couple

আদালতের নির্দেশের পরেও বাড়িছাড়া বৃদ্ধ দম্পতি

অভিযোগ, সোমবার বিকেলে পিন্টু ও তার দলবল প্রসূনের বাড়িতে দরজা ভেঙে ঢোকে। বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আসবাবপত্র-সহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৪
Share:

বাড়িছাড়া বৃদ্ধ দম্পতি। মঙ্গলবার রানাঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।

মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া যাবে না বাসিন্দাদের— আদালতের এই নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচেই রাত কাটালেন তাঁরা। পুলিশকে জানিয়েও সহযোগিতা মেলেনি বলেও দাবি করছেন খোদ কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। রানাঘাটের এই ঘটনা সামনে আসতেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

রানাঘাট শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাপ্রভু পাড়ার বাসিন্দা কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রসূন চক্রবর্তী। বছর চারেক আগে তিনি অবসর নিয়েছেন। বাড়িতে স্ত্রী রুমা চক্রবর্তীকে নিয়ে থাকেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। জানা গিয়েছে, গত বছর নিজের বসত বাড়ি পিন্টু ঘোষ নামের এক ব্যক্তির কাছে তিনি বিক্রি করেন। কথা ছিল, তিন মাসের মধ্যে পিন্টু বাড়ি কেনার টাকা বাড়ির মালিক প্রসূনকে মিটিয়ে দেবেন। তার পরেই বাড়ি ছাড়বেন মালিক। কিন্তু সেই টাকা না মিটিয়েই বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি ছাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকে পিন্টু ও তার দলবল। বাধ্য হয়ে মাসকয়েক আগে আদালতের দ্বারস্থ হন প্রসূন। পরবর্তীতে আদালত নির্দেশ দেয়, মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাকারী প্রসূন চক্রবর্তী পরিবার নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকবেন। জোর করে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করা যাবে না। কিংবা নতুন করে ওই বাড়ি কেউ দখল নিতেও পারবেন না।

অভিযোগ, সোমবার বিকেলে পিন্টু ও তার দলবল প্রসূনের বাড়িতে দরজা ভেঙে ঢোকে। বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আসবাবপত্র-সহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। রাতে বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকা আসবাবপত্র আগলে ছিলেন ওই দম্পতি। বিষয়টি নিয়ে প্রসূন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে আমি অসুস্থ। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। যে কারণেই বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত। শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারণেই পিন্টুকে বাড়ি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলাম। ও তিন মাস সময় চেয়েছিল টাকা মেটানোর জন্য। এখন টাকা না মিটিয়েই বাড়ির দখল নিয়েছে।’’

Advertisement

বাড়ির বাইরে পড়ে আছে আসবাবপত্র। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করেনি। দলবল নিয়ে ওরা যখন বাড়িতে আসে, পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ এসেছিল বাড়ি দখল হয়ে যাওয়ার পরে।’’

মঙ্গলবার সকাল থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়ান রুমা। এই দিন দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বৃদ্ধ দম্পতির আসবাবপত্র উঠোনে পড়ে রয়েছে। বাড়ির ভিতরে রয়েছে পিন্টুর পরিবারের সদস্যেরা। পিন্টুর বাবা মহাদেব ঘোষের দাবি, ‘‘ছেলে তিল তিল করে ১২ লক্ষ টাকা জমিয়ে বাড়িতে কিনেছে। সমস্ত টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে। তার পরেও ওঁরা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় চেয়েছিলেন। সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়েছি নিজেদের বাড়ির দখল নিতে।’’ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা যে মানা হয়নি, তা অবশ্য স্বীকারও করে নিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন উঠছে, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না? কেন বৃদ্ধ দম্পতিকে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হল? এই বিষয়ে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কুমার সানি রাজকে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মামলাকারীর আইনজীবী চন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার নতুন করে বিচারক পূর্ববর্তী নির্দেশ কার্যকরী করার কথা বলে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।’’

পুলিশ জানিয়েছে, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তা মানা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement