বামেরা জানাচ্ছে শুধু গুড়-বাতাসা বিলি নয়, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সবটাই মানুষের জন্য। —নিজস্ব চিত্র।
স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড, শহর কল্যাণী থেকে কমবেশি ৬ কিলোমিটার রাস্তা। জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালের রাস্তা হয়ে, বীরপাড়া বাসস্টপ ছাড়িয়ে কিছুটা হাঁটলেই মাঝেরচর। মূল রাস্তা থেকে ২ কিলোমিটারের বেশি হেঁটে তবেই পৌঁছনো যাবে মেলায়। ফেব্রুয়ারিতেই ঝাঁঝালো রোদ আর অপ্রত্যাশিত গরমে ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের পথের এই ক্লান্তি ভোলাতে জলসত্র নিয়ে বসেছে বামেরা। নদিয়ার মাঝেরচরের কুম্ভ মেলায় গুড়-বাতাসা বিলি করছে বামেদের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআই।
ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআইয়ের হিসেব বলছে, টানা তিন দিন তাঁরা প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষের হাতে গুড়-বাতাসা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জল তুলে দিয়েছেন। দুই বাম সংগঠনের ছাত্র-যুব স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, কুম্ভ মেলায় এই পরিষেবার মধ্যে রয়েছে সামাজিকতা এবং কর্তব্যবোধ। সবটাই তো মানুষের জন্য। তবে রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এটা বামেদের জনসংযোগ বাড়ানোর প্রয়াস।
কল্যাণীর সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠনের উদ্যোগে কুম্ভ মেলার মূলমঞ্চের বেশ কিছুটা আগেই এই জলছত্র তৈরি হয়েছে। মেলায় ঢুকে লাল কাপড়ে মোড়া স্টলে চোখ গেলেই এগিয়ে যাচ্ছেন মানুষ। যদিও বামেদের সংগঠনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ‘অংশগ্রহণ’ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল থেকে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তাদের বক্তব্য, এত দিন পুজোর সময় বইয়ের স্টল দিয়ে জনসংযোগ এবং বিক্রিবাটা করত বামেরা। এ বার নতুন সংযোজন জলসত্র।
যদিও এই সব অভিযোগ, কটাক্ষ উড়িয়ে বামেরা একে আর পাঁচটা সামাজিক অনুষ্ঠানের মতোই দেখছে। নেতারা জানাচ্ছেন, তাদের এই জলছত্র থেকে শুধু গুড়-বাতাসা বিলি নয়, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে। সবটাই মানুষের জন্য। সেখানে ধর্মীয় সমীকরণ খুঁজতে যাওয়া বোকামি। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, কুম্ভ মেলায় হারিয়ে যাওয়া দর্শনার্থীকে তাঁদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজেও সাহায্য করছেন রেড ভলান্টিয়াররা।
একদা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিরোধীদের গুড়-বাতাসা দাওয়াইয়ের নিদান দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সেই অনুব্রত ওরফে কেষ্ট এখন গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি। তাঁর গুড়-বাতাসা দাওয়াই যে বাম রাজনীতিতে হঠাৎ করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে, এমনটা বোধ হয় কেউ কল্পনা করেননি। এই প্রসঙ্গ তুলতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বাম নেতারা। সিপিএমের কল্যাণী এরিয়া কমিটির সম্পাদক সৌমেশ কংসবণিকের কথায়, ‘‘গুড়-বাতাসা কি কারও পেটেন্ট নেওয়া নাকি? আমরা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাইনি। আর পাঁচটা সামাজিক অনুষ্ঠানের মতোই শুধু জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।’’
তবে তৃণমূলের রানাঘাট সংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘ক্ষমতায় ফিরতে বামেরা কবে কালীঘাটে মানত করছে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছি।’’ কুম্ভ মেলায় বামেদের জলসত্র নিয়ে বিঁধছে বিজেপিও। রানাঘাটের সংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘সিপিআইএম বুঝে গিয়েছে তোষণের রাজনীতি করে এ বাংলায় আর জায়গা হবে না। তাই মূলস্রোতে ফিরছে। আগামিদিনে তৃণমূলকেও বিজেপির লাইন ধরতে হবে।’’