প্রথম গরমে ফাগুন-বৃষ্টি শহরে কিঞ্চিৎ স্বস্তি ছড়িয়ে গেলেও হাজরা লেনের বাসিন্দা সুপর্ণা ঘোষের কপালে ভাঁজ পড়ল লম্বা। বলছেন, ‘‘স্বস্তিটা অস্বস্তি নিয়ে ফিরে না আসে!’’ দু’ফোঁটা জলেই তাঁর পাড়ার নালা নদীর মতো উপচে পড়ে ফি বছর। এ বছর তার ব্যতিক্রম হবে, এমন সম্ভাবনা কম। বহরমপুর তাই বৃষ্টিকে বড় ভয় পায়।
হাজরা পাড়া, সতীমার গলি, মধুপুর রাইকানন— একের পর এক এলাকা নিকাশি নিয়ে তঠস্থ। তাঁদের সক্কলের এক রা, কাউন্সিলর থেকে পুরসভা, জানিয়ে কোনও লাভ এ যাবত হয়নি।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্র হাজরা লেনের এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘প্রতি দিন বাড়ির সদর দরজার সামনে নালার নোংরা জল উঠে আসে। বৃষ্টি হলে তো সে জল বাড়ির ভিতর পর্যন্ত গড়িয়ে যায়।’’
ছবিটা প্রায় একইরকম শহরের ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও। এলাকার বড়মুড়ি নিকাশিনালা প্লাস্টিক, থার্মকল-সহ নানা বর্জ্যে ভাগাড়ের চেহারা নিয়েছে। ১৪৪ বছরের পুরনো শহরে এখনও নিকাশি সমস্যার ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারেনি। কিছু এলাকায় নিয়মিত পরিস্কার না হওয়ায় আগাছা গজিয়েছে নালায়। কোথাও বা বর্জ্য রুখে দিয়েছে নালার গতি। বাসিন্দারা জানান, ভোট আসে ভোট যায় শাসক থেকে বিরোধী দলের লোকজন ভোটের সময় পানীয় জল থেকে শুরু করে আলো, রাস্তার নিকাশির প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ভোট চলে গেলেই তাঁরা সে আশ্বাস ভুলে যান বেমালুম!
বহরমপুর শহরের বড়মুরির ধারের বাসিন্দা সাইরুন বিবি কিংবা ক্ষেত্র হাজরা লেনের বাসিন্দা রাজদীপ হাজরা বলেন, ‘‘নেতাদের আশ্বাসের মেয়াদ পাঁচ বছরে মাসখানেকর জন্য। তার পর তাঁরা থাকেন না, শুধু প্রতিশ্রুতির স্মৃতি নিয়ে রয়ে যায় উপচে পরা নালা।’’
গির্জা মোড় থেকে ইন্দ্রপ্রস্থ, সতীমার গলি, উকিলাবাদ, নিরুপমাদেবী রোড— একটু বৃষ্টিতেই এক হাঁটু জল। শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধুপুর বাজার ও মধুপুর রাইকানন, গোরাবাজারের জোড়াপুকুর এলাকা, সমস্যাটার কোনও বেদ নেই।
পুরসভা অবশ্য দাবি করেছে, নিকাশিনালার নোংরা জল পরিশ্রুত (ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি) করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সে কাজে হাত দিয়েছে। ১২০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের আগামী ১৫ বছর ধরে ওই সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণও করবে। কিন্তু সেই চেনা আশ্বাস মিলবে তো? ভোটের আগে সে উত্তরে নিশ্চয় সদর্থক সাড়া মিলবে, কিন্তু তার পর? কেউ জানেন না!