ক্যাসেট-সিডির সঙ্গে গানেরও বাজার শেষ

সত্যজিৎ জানান, ঝুলনের পর থেকেই পুজোর গান বাজারে আসা শুরু হত। পুজোর আগে এইচএমভি ফি বছরের পুজোর গান দিয়ে বই বার করত। তা সংগ্রহ করতেন নগেন্দ্র।  সে সব এখনও আছে। তবে সত্তরের দশকের পর আর এই বই মিলত না।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

নদিয়া শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৩
Share:

পুজোর গানের বই। নিজস্ব চিত্র

ফুলিয়ার নগেন্দ্রচন্দ্র সাহারও রেকর্ডের সংগ্রহ ছিল এক সময়ে। তা এখন তাঁর ছেলে সত্যজিতের জিম্মায়। সত্যজিৎ জানান, ষাটের দশকে কলকাতা থেকে কর্মসূত্রে ফুলিয়ার আসেন তাঁর বাবা। এক বন্ধু তাঁকে একটা বুশ কোম্পানির পুরনো চেঞ্জার রেকর্ড প্লেয়ার বিক্রি করেছিলেন। সেখান থেকেই নেশা। পরে মাইকের ব্যবসা শুরু করেন।

Advertisement

সত্যজিৎ জানান, ঝুলনের পর থেকেই পুজোর গান বাজারে আসা শুরু হত। পুজোর আগে এইচএমভি ফি বছরের পুজোর গান দিয়ে বই বার করত। তা সংগ্রহ করতেন নগেন্দ্র। সে সব এখনও আছে। তবে সত্তরের দশকের পর আর এই বই মিলত না।

নদিয়া জেলার তথ্য আধিকারিক দ্বীপান্বিতা মণ্ডলের বেশ মনে আছে, তাঁর যখন বছর দুয়েক বয়স, পুজো মণ্ডপে মাইক ধরে গেয়েছিলেন, ‘চোখে চোখে কথা বলো, মুখে কিছু বলো না’! বাবার ছিল গান শোনার নেশা। প্রচুর রেকর্ড কিনতেন। তার পরেও বাছাই করা জনপ্রিয় পুজোর গান বাজত রেডিয়োর বিবিধ ভারতী আর অনুরোধের আসরে। তা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল দীপান্বিতার।

Advertisement

স্কুল শিক্ষক বিতান চৌধুরীরও গান শোনার নেশা। তাঁর বাবার রবীন্দ্র সঙ্গীতের রেকর্ডের বড় সংগ্রহ ছিল। এ ছাড়া শচীনকর্তা, পঙ্কজ মল্লিক, হেমন্ত, মান্না, আশা, লতা, আরতি, বনশ্রী, পিন্টু ভট্টাচার্য, কিশোর কুমার, শ্রাবন্তী মজুমদার, হৈমন্তী শুক্লর পুজোর গানের সংগ্রহ। এখন ভরসা ইউটিউব। ‘‘ইউটিউবে গান শোনা হয় বটে, তবে তাতে রেকর্ডের সেই অনুভুতিটা পাই না’’— বলেন বিতান।

নব্বই দশকে পুজোর গানে বাজার মাতিয়েছিলেন কুমার শানু। এই দশকেই সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ‘তোমাকে চাই’ বাংলা গানের নতুন দিক খুলে দিল। এর পর নচিকেতা, শিলাজিৎ, অঞ্জন— বাঙালির গানে বাঁকবদল। কিন্তু এই গান পুজো মণ্ডপে বেশি বাজতে শোনা যায়নি তখনও।

সিডি-ডিভিডি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিল্পীই পুজোর গানের রেকর্ডিং বন্ধ করে দিয়েছেন। গায়িকা ইন্দ্রাণী সেন জানালেন, তিনি শেষ পুজোর গান গেয়েছেন ২০১৩ সালে। ‘‘আগে যখন পুজোর নতুন রেকর্ড বা ক্যাসেট হাতে আসত, একটা অনুভূতি হত। ইউটিউবের গানে সেই অনুভুতি পাওয়া যায় না।’’

মানুষের কাছে গান সস্তা হয়ে যাওয়াও গান হারানোর একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করেন গীতিকার সৈকত কুণ্ডু। ২০০৪ সালেও যেখানে তিনি পুজোয় ৩৯টি গান লিখেছিলেন, সেখানে এ বছর পুজোর জন্য একটাও লেখেননি। তাঁর মতে, বিজ্ঞাপন হিসাবে শিল্পীরা মাঝে মাঝে দু’একটি নতুন গান ইউটিউবে দেন। তবে ক্যাসেট-সিডির সঙ্গে পুজোর গানেরও বাজার শেষ। শিল্পীদের প্রধান ভরসা স্টেজের অনুষ্ঠান। সৈকত বলেন, ‘‘এখন বেশির ভাগ মণ্ডপে নতুন-পুরনো কোনও গানই বাজে না। ঢিক ঢিক করে শুধু বাজনাই বেজে চলে। গানটাই মিসিং।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement