প্রতীকী ছবি।
পুরনো চেহারায় পুজো ফেরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে আরও আঁটোসাঁটো বিধির মুখে পড়ল পুজো উদ্যোক্তারা। ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি’র সেই আবেদন বুধবার খারিজ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক মহলে স্বস্তির শ্বাস পড়লেও পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের কপালে ভাঁজ ঘন হয়েছে। সিঁদুর খেলা-ধুনুচি নাচ বন্ধ হওয়ায়, প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তাঁদের আশায় যে বালি পড়েছে ঠারেঠোরে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন পুজো কর্তাদের অনেকেই। তবে চিকিৎসকেরা এ আবেদন কার্যত খারিজ হওয়ায় বলছেন— চার দিনের আনন্দ যে বড় ভয়াবহ দিন বয়ে আনবে এই সহজ সত্যিটা বুঝতে ছেলেমানুষি অভিমান-অসন্তোষ এ বার বন্ধ হওয়া দরকার। পুজো কর্তাদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দেওয়া উচিত।
তবে, নির্দেশ শুনে কিংবা দশমীর সিঁদুর খেলাতেও হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞাকে মান্যতা দিয়ে বুধবার বেশ কিছু মণ্ডপে সে ব্যাপারে নির্দেশিকাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিধি মানতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পুজো কমিটি নতুন করে মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেডের প্রসার ঘটিয়েছে। কেউ বা মণ্ডপ খোলা রেখেছেন, যাতে রাস্তা থেকেই (যার অর্থ বেশ কিছুটা দূর থেকে) প্রতিমা দর্শন করতে পারেন সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মণ্ডপের প্রবেশ পথে স্যানিটাইজ়ার টানেল বসানোরও উদ্যোগ নিয়েছে কয়েকটি পুজো কমিটি। তবে তা দেখে জেলা পুলিশের প্রশ্ন— দর্শক সমাগমই যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে ওই টানেল বসানো মানে তো মানুষকে মণ্ডপে ডেকে আনা!
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘মণ্ডপের ভিতরে কোনও কিছুই করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু ব্যারিকেডের বাইরে উৎসবের মেজাজে বহু মানুষ ভিড় জমালে তা কী করে সামাল দেওয়া যাবে তা ভেবেই কুল কিনারা মিলছে না। তার চেয়ে এ বার পুজো মণ্ডপ না করতে দিলে মানুষের হুজুগে রাশ টানা সহজ হত।’’ তবে ভিড় ঠেলতে পুজো কমিটিগুলো শুধুই পুলিশ নয়, অনেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছে বলেও জানা গিয়েছে।
মধুপুর বিষ্ণুপুরকালী বাড়ি ফাঁকা মাঠেই গত ২৫ বছর ধরে পুজো করেছেন ‘আমরা ক’জন’। ক্লাবের সম্পাদক সুশোভন চৌধুরী বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকেরা রাস্তার ভিড় সামলাবেন। মণ্ডপের সামনের রাস্তাকে দু’ভাগ করা হয়েছে।” এখন প্রশ্ন ভিড় সামাল দিতে গিয়ে সেই স্বেচ্ছাসেবকদের যদি করোনা সংক্রমণ ঘটে তার দায় কে নেবে! আয়েশবাগ সর্বজনীনের সম্পাদক রতনকান্তি পাল জানান মন্দিরে কয়েক ধাপে অঞ্জলির ব্যবস্থা থাকবে বিধি মেনে। কিন্তু দশমীর দিন সিঁদুর খেলা হবে না।
প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য সরকারের অনুদান নিয়ে। জেলার অন্তত ৩৮৬টি পুজো কমিটি ৫০ হাজার টাকার সেই সরকারি অনুদান পেয়েছে— সেই অনুদানের টাকায় ফেসকভার, স্যানিটাইজার কিংবা করোনা বিষয়ে সচেতনতার প্রচারে কতটা খরচ করা হয়েছে প্রশ্ন তা নিয়েও। বহরমপুরের বেশ কয়েকটি বড় পুজো উদ্যোক্তা বলছেন, ক্লাবের তহবিলের টাকায় স্যনিটাইজ়ার কিংবা ফেসকভারের ব্যবস্থা করেছেন। অনুদানের টাকা পেলে তা দিয়ে বকেয়া মেটাবন তাঁরা।