ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন।
একুশের ফেস্টুন-ব্যানারে ছেয়ে আছে ডোমকল, ছবিতে ছবিতে ছয়লাপ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নিচে ডোমকল পুরপ্রধানের হাসি হাসি মুখ— গত একুশের সঙ্গে তফাতটা বড় চোখে পড়ছে এ বার।
ব্যানার-ছবি এ বারও আছে। তবে কোথাও নেই ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন। বরং দলের দুই স্তম্ভের সঙ্গে তৃতীয় সংযোজন শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক মহলের দাবি, একদিকে সৌমিকের বিরুদ্ধে পুর কাউন্সিলরদের বিদ্রোহ, অন্য দিকে শুভেন্দু লবির আক্রমণ— এই দু’য়ের জাঁতাকলে এ বার যেন একুশের উৎসব থেকে ব্রাত্য সৌমিক।
ডোমকল পুরসভার ১৩ জন কাউন্সিলর তাঁর বিরুদ্ধে এনেছে অনাস্থা। আর তা নিয়ে বুধবার তৃণমূল ভবনে জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী বসেছিলেন আলোচনায়। সেখানে সৌমিকের প্রস্থান প্রায় সম্পূর্ণ বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
উপ-পুরপ্রধান প্রদীপ চাকী দাবি করেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী সভায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন সৌমিককে পুরপ্রধান আর করা হচ্ছে না। তৃণমূল ভবনের সভায় তিনি সৌমিককে বলেন, ‘তোমাকে তিন দিন সময় দিচ্ছি, নিজেদের মধ্যে যা সমস্যা হয়েছে মিটিয়ে নাও।’ উত্তরে সৌমিক জানান, তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। শুভেন্দুদার মুখের উপরে সটান এমন না করে দেওয়ায় তিনি জানিয়ে দেন আমাদের দলের এখনও এমন দুরাবস্থা হয়নি যে, অনাস্থা আনতে হবে। ইস্তফা দাও।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌমিক সে দাবিও মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে কাউন্সিলরদের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন সেটা ঠিক। আমি সরাসরি বলেছি, যাঁরা দলের অনুশাসন না মেনে অনাস্থা এনেছে তাদের সঙ্গে আমি বসতে পারব না।’’
তবে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সৌমিক তা মেনে নিতে রাজি। ফলে গোটা বিষয়টি এখন দলনেত্রীর সিদ্ধান্তের উপরে ঝুলে রইল। তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ কথা বলে মেনে নিচ্ছেন সৌমিকও।
এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি যা বলার বলে এসেছি। এ বার দলনেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন, মেনে নেব।’’
বুধবার তৃণমূল ভবনের ডোমকল পুরসভার বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর ও পুর প্রধান সৌমিক হোসেনকে নিয়ে আলোচনার খবর বাইরে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। কেউ লিখেছেন, ‘স্বঘোষিত নবাবের পতন।’ কেউ বা লিখেছেন, 'ডোমকল দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার অপেক্ষায়।'
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে একাধিক এমন পোস্ট করেছেন দলের বিদ্রোহী নেতা-কর্মী ও তাঁদের অনুগামীরা। রাজনৈতিক মহলের দাবি, প্রায় সাতাশ মাস আগে ডোমকল পুরসভার নির্বাচনের দিন ভোট দিতে পারেনি সাধারণ মানুষ, বিরোধী দল সভা সমিতি করতে গেলে ভেঙে দেওয়া হয়েছে মঞ্চ, খুলে ফেলা হয়েছে মাইক। আর দলের অন্দরে ক্ষোভ নেতা কাউন্সিলরদের মর্যাদা না দেওয়া। এই উভয় সঙ্কটে একুশের আগেই সৌমিক এখন প্রায় এক ঘরে।