মোষের গাড়ি নিয়ে সীমান্তের মাঠে রওনা দিয়েছিল রানিনগর সীমান্তের চাষি কাশেম আলি। নিয়ম মেনে ভোটার কার্ড বিএসএফের কাছে জমা করেই পার হয়েছিল চৌকি। কথা ছিল চাষের কাজে শেষ করে পাট বোঝাই গড়ি নিয়ে বিকেলের আগেই ফেরার। কিন্তু সকালে পার হওয়া চাষি সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পোহালেও আর ঘরে ফেরেনি। রানিনগর থানা এলাকার কাহারপাড়া বিওপির জওয়ানদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। শনিবার ওই ঘটনার পর রীতিমত চিন্তায়, বিএসএফ, পুলিশ থেকে প্রশাসন। কিন্তু এ ভাবে মোষ গাড়ি-সহ চাষি উধাও হল কোথায়?
এক জওয়ানের দাবি, ম্যাজিক নয়, এটাও এখন পাচারের একটি বড় কৌশল। এ দেশের ৮০ হাজারের মোষ ওপারে (বাংলাদেশে) পৌঁছে দিতে পারলেই প্রায় ৩ লক্ষ নগদ। ফলে কেবল কলার ভেলা ভাসিয়ে নয়, নানা কৌশল কাজে লাগিয়ে পাচার চলছে।। যেমন গরু মোষ গাড়ি বা লাঙল-সহ চরের মাঠে চাষের কাজে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমনকি লাঙল গরুর গাড়ি বিক্রি করে আসছে বাংলাদেশের গ্রামে। এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘দামের তফাতটা এই সময় প্রায় আকাশ পাতাল। ফলে পাচারকারী থেকে সীমান্তের সাধারণ মানুষ চাষের নামে লাঙল এবং গরুর গাড়ির সঙ্গে গত ছ’মাসে ১১ জোড়া মোষ গরু পাচার করেছে কেবল রানিনগর সীমান্ত দিয়ে।
এ ক্ষেত্রে কেবল পাচারকারী নয় সীমান্তের একাংশের চাষিরাও জড়িয়ে পড়ে পাচারের কাজে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘অনেক সময় অসহায় চাষীরা চড়া দাম পেয়ে চাষের কাজে গিয়ে গরু বা মহিষ বিক্রি করে অন্য পথে ফিরে আসে দেশে।’’ সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় দেখা যায় কখনও মেয়ের বিয়ে কখনো বা স্ত্রীর চিকিৎসা বা পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের চিকিৎসার জন্য এই কাজ করছে চাষি। ফলে অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়াটাও মানবিক কারণে হয়ে ওঠে না। যদিও রানিনগর এলাকার সীমান্তের চাষিদের দাবি, এ রকম ঘটনা খুব কম ঘটে সীমান্তে। কখনও কখনও পাচারকারীদের টোপে পড়ে কোনও চাষি এমনভাবে পাচার করে থাকে গরু মোষ। আর তার প্রভাব পড়ে সাধারন চাষিদের উপরে। হাজার হাজার চাষি এই ঘটনার জন্য চরের মাঠে যেতে গিয়ে বিএসএফের কাছে নাজেহাল হয়।
এক দিকে উত্তাল পদ্মা, অন্য দিকে কাঁটাতার হীন বড় চাষের মাঠ। বিএসএফের চৌকি পেরিয়েই সেই চাষের মাঠে পৌঁছে গেলে আর কোনও বাধা নেই। বাংলাদেশের গ্রামের চাষি আর ভারতীয় চাষি মিলেমিশে একাকার। ফলে চাষের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এর আগেও গোপনে অনেক সময় মাদক পাচার হত রানিনগর জলঙ্গি সীমান্ত দিয়ে।