কলকাতায় দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘কাটমানি হটাও’। ফাইল চিত্র
আগে ছিল ব্যস্ততা, এখন দোসর হয়েছে ভয়।
মুখ্যমন্ত্রী আসছেন শুনলে প্রশাসনিক কর্তারা এখন অসম্পূর্ণ কাজের তালিকা নয়, তোলা আদায়ের অভিযোগে রাশ টানা গেল কি না, খোঁজ নিচ্ছেন সে দিকে!
কলকাতায় দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘কাটমানি হটাও’। দিঘায় গিয়ে দু’দিন আগে প্রশাসনিক সভায় এক পর্দা সুর চড়িয়ে বলেছেন, ‘‘দেখবেন, পুলিশ যেন ঘুষ না নেয়।’’ এখন অপেক্ষা মুর্শিদাবাদে এসে মুখ্যমন্ত্রী কী বলবেন।
কবে আসছেন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও খবর না থাকলেও জেলা প্রসানের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আগে থেকে তৈরি হয়ে না থাকলে কোপ পড়তে কতক্ষণ! তাই তঠস্থ হয়ে আছি আমরা।’’ তাঁদের একটাই লক্ষ্য, কোথাও যেন আঙুল তুলতে না পারে কেউ। কোথাও যেন গাফিলতি না থাকে, তার জন্য তৎপর হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে মিডডে মিল, অঙ্গনওয়াড়ি, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ, আবাস যোজনার উপর যেমন জোর দেওয়া হয়েছে, তেমনই সমান তালে ঘুষ এবং কাটমানি রোখার দিকেও নজরদারি রয়েছে প্রশাসনের।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কবে জেলায় আসবেন তা জানা নেই। তবে কাজে গতি আনতে সব দিক আঁটঘাঁট বেঁধে থাকতে হবে তো!’’ আর সে জন্যই স্কুল থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র— পরির্দশনও শুরু করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। শনিবার জেলার সব বিদ্যালয় মিডডে মিল কেমন চলছে তা পরিদর্শন করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। এ ছাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ পঞ্চায়েত ও পুরসভার কর্তাদের ঘুরে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য জেলার ২৬ টি ব্লকে ৩৭ জন অফিসারকে পরিদর্শন করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ
দিয়েছেন তিনি।
টেন্ডার নিয়ে মাঝে মধ্যে অভিযোগ ওঠে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। কান্দিতে শাসকদলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল দেখা দিয়েছিল। এ বার তাই ই-টেন্ডারের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। নজর দেওয়া হয়েছে বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পেও। সেখানে যাতে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে রাশ টানা যায় সে ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রনিধি থেকে পঞ্চায়েত কর্মী— সবাইকে অলিখিত ভাবে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০১০ সালের আর্থ সামাজিক সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া বাংলা আবাস যোজনার তালিকা অনুযায়ী উপভোক্তাদের নামে টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। এই বিষয়টি বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তাদের বোঝানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছর থেকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিরোধীরা বিস্তর অভিযোগ ওঠে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কেমন কাজ হচ্ছে তাও ঘুরে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।