প্রতীকী ছবি।
করোনার চেয়েও কাটমানির আশঙ্কা যে বেশি, জেলা প্রশাসনের একটি লিফলেট তা স্পষ্ট করে দিল। ঘরে ঘরে বিলি করা জেলা প্রশাসনের সেই লিফলেট স্পষ্টই সাবধান করছে-- `টাকা এসেছে, আপনার নামে। ঘর তৈরি করে দেওয়ার নামে সে টাকার কেউ ভাগ চাইলে থানায় জানান।` জেলার এক শীর্ষ আমলা বলছেন, ``এই অতিমারির চেয়েও ভয়ঙ্কর কাটমানির ভাইরাস, না হলে দেশের এই অবস্থায় আমাদের এমন সতর্কতা নিতে হয়!``
মুর্শিদাবাদ জেলায়, বাংলা আবাস যোজনায় এ বছর ১.১৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে। সমীক্ষা শেষ, স্ংশ্লিষ্ট উপভোক্তাদের নামের তালিকা তৈরি সম্পূর্ণ। তাঁদের নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন কিস্তিতে সে টাকা আসবে। কিন্তু সে টাকা আত্মসাতের জন্য যে অনেকেই ওঁত পেতে রয়েছেন, প্রশাসন তা আগাম অনুমান করেই সতর্ক করতে শুরু করেছে লিফলেট বিলি।
মাস কয়েক আগেই শাসক দল তৃণমূলের ভোট-কুশলী পিকে`র পরামর্শে কাটমানির বিরুদ্ধে নিজেই নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। মুখ্যমমন্ত্রী নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, দলের কেউ কাটমানি বা কোনও প্রকল্পে সুয়োগ পাইয়ে দেওয়ার নামে উতকোচ চাইলে সটান পুলিশের দ্বারস্থ হতে হবে। নতুন করে আবাস যোজনার টাকা আসতেই কাটমানির অঁচ পেয়ে তাই ফের সেই কোমর বাঁধছে প্রশাসন।
যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিফলেট দিয়ে বলা হচ্ছে, সরকারি নিয়মে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাড়ি তৈরির তিনটি স্তরে, তিন বারে টাকা আসবে। এ ব্যাপারে কারও কোনও আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে টাকা দেবেন না। ওই লিফলেটে বলা হয়েছে--আপনার কাছে টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ব্লক, থানা বা জেলায় অভিযোগ জানান।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, ‘‘বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি লিফলেট দেওয়া হচ্ছে। কেউ যাতে প্রতারিত না হন তাই এই আগাম প্রস্তুতি। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে আমরা মাইকে ঘোষণাও করব।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক আগেই আর্থ সামাজিক সমীক্ষা হয়েছে। সেই সমীক্ষার উপরে ভিত্তি করে দুঃস্থ মানুষকে বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর আগামী দু’বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে ১লক্ষ ৮৬হাজার বাড়ি তৈরি করা হবে। তারই প্রথম ধাপে, এ বছর, ১.১৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।
এ জন্য উপভোক্তার নথিপত্র এবং যেখানে বাড়ি তৈরি হবে তার ই-তৈথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। নথিপত্র সংগ্রহের সময়ে উপভোক্তার হাতে ওই লিফলেট তুলে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি প্রকল্প পেতে গিয়ে কাটমানি দেওয়া এরাজ্যে নতুন কিছু নয়। বছর খানেক আগে কলকাতায় দলীয় কর্মসূচিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি তোলা নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন। এর পরে জেলায় জেলায় লোকজন শাসকদলের নেতাকর্মীর বাড়ির ঘেরাও করে কাটমানি ফেরতের দাবি তুলে ছিলেন মানুষ। তার আঁচ মুর্শিদাবাদেও পড়েছিল। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘শাসকদল ইতিমধ্যে টের পেয়েছে তাদের দলের নেতাদের কাটমানি খাওয়া অভ্যসে পরিণত হয়েছে। ২০২১সালের নির্বাচনের প্রাককালে এ ভাবে স্বচ্ছতার নাম করে কাদামাখা জামা ছেড়ে পরিস্কার জামা পরানোর চেষ্টা চলছে!’’
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস অবশ্য বলেন, ‘‘যাঁরা অভিযোগ করেছেন তাঁরা দীর্ঘদিন এই কাজ করে এসেছেন। আমাদের সরকার তা বন্ধ করার উদ্যোগী হয়েছে। আর সে জন্য এই লিফলেট বিলি।’’