ফর্ম বিলি। নিজস্ব চিত্র।
অধিক সংখ্যক চাষিকে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের সহায়তা দিতে কাজে লাগানো হল ইমাম, মুয়াজ্জিনদের। মসজিদ থেকে আবেদন পত্র বিলি করার কাজও শুরু করল কৃষি দফতর। প্রথম দিনই শুক্রবার জুম্মার দিনে ব্যাপক সাড়া পড়ল হরিহরপাড়া ব্লকে। হরিহরপাড়া ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার উদ্যোগে ব্লকের ডল্টনপুর, মাদারতলা, শ্রীপুর, খলিলাবাদ সহ একাধিক মসজিদ থেকে শুরু হল আবেদন পত্র বিতরণের কাজ। দফতরের কর্মীদের পাশাপাশি ইমাম, মুয়াজ্জিনরাও চাষিদের হাতে তুলে দিলেন আবেদনপত্র।
এ দিন বিভিন্ন মসজিদে ‘কৃষকবন্ধু’ ও ‘ফসল বিমা যোজনা’ প্রকল্পের আবেদনপত্র নেওয়াতে চাষিদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গিয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে প্রতিটি চাষিকে জমির পরিমাণ ও ফসলের আনুপাতিক হারে সহায়তা দিতে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্যের কৃষি দফতর। অধিক সংখ্যক চাষি যাতে এই প্রকল্পের সহায়তা পেতে পারেন তার জন্য ইতিমধ্যে আবেদনের নিয়মও শিথিল করেছে কৃষি দফতর। পরচার পরিবর্তে শুধু মাত্র জমির দলিল বা তথ্য, স্বীয় ঘোষণা পত্র, পরিচয় পত্র ও ব্যাঙ্কের পাশবই দিয়েই এই সহায়তা পাবার জন্য চাষিরা আবেদন করতে পারবেন। বিভিন্ন রকমভাবে চাষিদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছে কৃষি দফতর। সম্প্রতি ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির ক্যাম্পের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আবেদন পত্র বিলি ও জমা নেওয়ার জন্য বিশেষ শিবিরেরও আয়োজন করছে কৃষি দফতর।
যদিও বিরোধীদের দাবি ভোটের আগে মন জয় করতে রাজ্য সরকার এভাবে 'দুয়ারে' পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এত কিছু সত্ত্বেও এক শ্রেণির চাষি এই প্রকল্পে জন্য আবেদন করছেন না। ফলে সরকারি সহায়তা এবং নিশ্চিত আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এক শ্রেণির চাষি। সমস্ত চাষি যাতে এই প্রকল্পের সহায়তা পান তার জন্য এবার মসজিদ থেকে প্রচারের পাশাপাশি আবেদন পত্র বিলি করার কাজও শুরু হল হরিহরপাড়া ব্লক থেকে।
জানা গিয়েছে পালস পোলিও টিকাকরণ, বাল্যবিবাহ রদ, হুইট হলিডের প্রচার, মিশন নির্মল বাংলা সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রচার এবং সামাজিক কাজে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলার ইমাম, মুয়াজ্জিনরা। ফলে 'কৃষক বন্ধু' প্রকল্পের সহায়তা বেশি সংখ্যক চাষির কাছে পৌঁছে দিতে ভরসা সেই ইমাম মুয়াজ্জিনরাই। জানা গিয়েছে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের পাশাপাশি ‘বাংলা ফসল বিমা যোজনা’র প্রচারও শুরু হয়েছে মসজিদ থেকে। হরিহরপাড়া ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা মৌমিতা মজুমদার বলেন, ‘‘বিভিন্ন সামাজিক কাজে ও সরকারি প্রকল্পের প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন ইমাম মুয়াজ্জিনরা। তা ছাড়া অধিকাংশ চাষিও মসজিদে নমাজ পড়তে আসেন। শুক্রবার সেই সংখ্যাটা বাড়ে। ফলে আমরা সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইছি। ইমাম, মুয়াজ্জিনরাও সহায়তা করছেন।’’ জানা গিয়েছে মসজিদ থেকে বিলি করা আবেদন পত্র নথি সহ পুরণ করার পর কৃষি দফতরের কর্মীরা পরবর্তী শুক্রবার তা সংগ্রহ করবেন। তা ছাড়া চাষিরা 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচির শিবিরে বা সংশ্লিষ্ট দফতরেও চাষিরা ওই আবেদন জমা করতে পারবেন। হরিহরপাড়ার ডল্টনপুর জুম্মা মসজিদের ইমাম মৌলানা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘মুসল্লিদের অধিকাংশ চাষাবাদের সাথে যুক্ত। আমরা কৃষি দফতরের দেওয়া আবেদন পত্র বিলি করেছি। আবেদনের নিয়ম শিথিল হওয়ায় বিষয়টিও আমরা প্রচার করছি।’’ ডল্টনপুর গ্রামের চাষি আলি হোসেন শেখ, ওস্তার আলি মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘আমরা চাষাবাদ নিয়েই থাকি। তবে, কৃষকবন্ধু বিষয়ে অতসত জানতাম না। আজ মসজিদে নমাজ পড়তে এসে বিষয়টি শুনলাম। আবেদন পত্র নিয়েছি। সামনে শুক্রবার জমা করব।’’