—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এমসে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কিছু দিন কার্যত চুপচাপ থাকার পর ফের তৎপরতা বেড়েছে সিআইডি-র। এ বার তলব করা হয়েছে কল্যাণী এমসের নির্বাহী অধিকর্তা রামজি সিংহকে।
সূত্রের খবর, সোমবার সকাল ১১টায় নির্বাহী অধিকর্তাকে ভবানী ভবনে ডেকে পাঠিয়েছিল সিআইডি। তবে এদিন তিনি যেতে পারবেন না বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। তবে কেন তিনি গেলেন না বা এ দিনের পরিবর্তে কবে যাবেন, তা স্পষ্ট হয়নি। দুপুরে ফোন করা হলে রামজি বলেন, “এই বিষয়ে আমি কিছুই বলব না।”
যোগ্যতা না থাকা সত্বেও প্রভাবশালীদের সুপারিশে ওই কেন্দ্রীয় হাসপাতালে দুই বিজেপি বিধায়কের আত্মীয়ের চাকরি হয়েছে, গত বছর এই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছে সিআইডি। শুধুই চাকদহের বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ এবং বাঁকুড়ার বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানাই নন, জড়িয়েছে বিজেপির আরও কয়েক জন নেতা-সাংসদের নামও। এর আগেও সিআইডি হাসপাতাল কর্তপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিল। সে সময় হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল যে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে।
এই দফায় এমসের অধিকর্তা সম্ভবত দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাঁর দরজায় ফের কড়া নেড়েছে সিআই়ডি। গত শুক্রবার ভোরে ইডি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার পরে সে দিন বিকালেই সিআইডির একটি দল নদিয়ায় আসে। সূত্রের দাবি, হরিণঘাটার বড় জাগুলিয়ায় বঙ্কিম ঘোষের বাড়িতে গিয়েছিল। ওই রাতেই বঙ্কিম নিজের গাড়িতে চেপে বেরিয়ে যান। তার পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন টানা বন্ধ রয়েছে। ফলে দলেরই নানা মহলে তাঁকে নিয়ে নানা রকম জল্পনা চলছে।তিনি কোথায় রয়েছেন, তা নিয়ে নানা নেতানেত্রী নানা রকম পরস্পরবিরোধী কথাও বলছেন।
শনিবার সকালে বঙ্কিমের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছিল, তিনি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন। গত মাসেই কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর হৃদরোগের অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেই সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্যই তিনি ফের কলকাতায় গিয়েছেন। দিন দুয়েক বাদে ফিরবেন। সোমবার সকালে ফের বিধায়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর স্ত্রী সুজাতা ঘোষ ও অন্য দু’এক জন রয়েছেন। বিধায়ক নেই। তবে বিধায়কের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে দাবি করে সুজাতা বলেন, “উনি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন। যে দিন ডাক্তারের দেখার কথা ছিল, দেখানো যায়নি। ডাক্তার দেখিয়ে বুধবার বা বৃহস্পতিবার ওঁর ফেরার কথা রয়েছে।”
এমসের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নদিয়ায় বিজেপির আরও দুই নেতানেত্রীর নাম রয়েছে। তাঁদের এক জন রানাঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার, অপর জন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য দীপা বিশ্বাস। সোমবার পর্যন্ত অবশ্য তাঁদের তলব করা হয়নি বলে সূত্রের খবর। জগন্নাথ বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই মামলায় সিআইডি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।” দীপাও কার্যত একই দাবি করেছেন।
তবে, ঘটনাচক্রে খাদ্য দুর্নীতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরেই সিআইডি নতুন করে নড়ে-চড়ে বসায় কটাক্ষ করতে চাড়ছেন না বিজেপি নেতারা। তাঁদের দাবি, সিআইডি-কে মাঠে নামিয়ে প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করতে চাইছে তৃণমূল সরকার। জগন্নাথের অভিযোগ, “সাধারণ মানুষের মুখের গ্রাস চুরি করে নেতা ধরা পড়েছে। আর, জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হতেেই সিআইডি-কে দিয়ে ওরা পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে।”
তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নেই। সিআইডি যদি কাউকে ডেকে থাকে, সঙ্গত কারণেই ডেকেছে। কিন্তু বিজেপি-বিরোধী ইন্ডিয়া জোট যখন থেকে শক্তিশালী হয়েছে, ইডি-র তৎপরতা লক্ষণীয় ভাবে বেড়ে গিয়েছে!”