যত সময় যাচ্ছে, ততই নানা বয়সের মেয়েদের ভিড় বাড়ছে পলাশির এনআরসি-বিরোধী ধর্নামঞ্চে। দিনভর তো বটেই, এমনকি রাতেও। নিজস্ব চিত্র
সিএএ-এনআরসি বিরোধী ধর্নামঞ্চ তিরিশ দিন পার করল পলাশিতে। যদিও সে উপলক্ষে আলাদা কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল না রবিবার। তবে আগের তুলনায় মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো বেশি।
দিল্লির শাহিন বাগের দাদিরা বা কলকাতা পার্ক সার্কাসের মায়েরা— অনেক দিন ধরেই এনআরসি বিরোধী ধর্নায় সামনের সারিতে মহিলারা রয়েছেন। পলাশিতে প্রথম দিকে তাঁদের উপস্থিতি খানিক কম ছিল। কিন্তু এখন তাঁরাই দলভারী অনেক সময়ে। সঙ্কীর্ণ ঘেরাটোপ পেরিয়ে তাঁরা বেরিয়ে এসেছেন। গত এক মাসের পথচলায় এটাই বোধহয় এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
গত ২৫ জানুয়ারি পলাশির এই ধর্নামঞ্চ শুরু হওয়ার তিন দিন পর থেকেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা হাফিজুল শেখ এখানে এসে পড়ে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে আমি কলকাতায় পার্ক সার্কাসের আন্দোলনে শামিল ছিলাম। যখন শুনলাম, পলাশিতে ধর্না হচ্ছে, তখন এখানে চলে এলাম। যত দিন এই মঞ্চ থাকবে, আমিও থাকব।’’
শাহিন বাগ বা পার্ক সার্কাসের মতো যদিও বিপুল মানুষের সমাগম নেই, প্রচারের আলো নেই, তবুও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মহিলা ও পুরুষদের জমায়েত নজর কেড়েছে অনেকের। তেহট্ট কলেজের অধ্যক্ষ তথা কৃষ্ণনগর এনআরসি বিরোধী নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক শিবশঙ্কর পাল, কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফেরদোস শেখেরা এ দিন মঞ্চে এসেছিলেন।
গোড়ার দিনগুলির তুলনায় যে ফারাক সবচেয়ে বেশি নজর টানছে তা হল ধর্নামঞ্চে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি। প্রথম প্রথম একটি নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যে মহিলাদের বসার ব্যবস্থা করা হলেও কিছু দিনেপ মধ্যেই তা তুলে দেওয়া হয়। পুরুষদের অনেকেই দিনে কাজে চলে যান। দিনের পর দিন তো কাজ না করে ধর্নায় বসে থাকা চলে না। তাই ক্রমশ মহিলারা এসে হাল ধরছেন। তাঁদেরও কাউকে রোজগার, কাউকে সংসারের কাজ সামলে এসেই হাল ধরতে হচ্ছে। তবে ধর্না কমিটির আক্ষেপ, এই মঞ্চে মুসলিমেরা যে ভাবে আসছেন, সেই তুলনায় স্থানীয় হিন্দুদের এখনও তেমন করে পাওয়া যাচ্ছে না।
ধর্না কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রায়ই মঞ্চে নাটক, আবৃত্তি, গান ইত্যাদি হচ্ছে। প্রথম-প্রথম বক্তাদের আমন্ত্রণ করে আনতে হত। এখন কলকাতা বা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন করে লোকজন যোগাযোগ করছেন। মঞ্চ কমিটির তরফে কামালউদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘যত দিন না কালা নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করা হবে, আমাদের আন্দোলন চলবে। গ্রামাঞ্চল থেকে যে ভাবে মহিলারা এসে আমাদের সঙ্গে ধর্নায় যোগ দিচ্ছেন, সেটাই সবচেয়ে ভাল লাগছে।’’