সবুজ-সার: বেড়ে উঠেছে ধনচে গাছ। —নিজস্ব চিত্র।
ফের সেই চেনা পথে হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দফতর।
দু’টো চাষের মাঝের সময়ে জমিতে তেঁতুল পাতার মতো দেখতে এক ধরনের গাছ লাগাতেন চাষিরা। মাস দেড়েকের মধ্যে ছয়-সাত ফুট লম্বা হয়ে উঠত ঘন সবুজ সেই গাছ। তারপর সেই গাছ কেটে জমিতেই ফেলে রাখা হতো। গ্রাম বাংলায় সে গাছের চেনা নাম ‘ধনচে’। জমির উর্বরতা শক্তি বাড়াতে একটা সময় ওই গাছের উপরেই ভরসা করতেন চাষিরা।
তারপর সময় বদলেছে। জমি হয়েছে বহু ফসলি। কাস্তে-লাঙলের দিন গিয়েছে। এসেছে সবুজ বিপ্লব। প্রযুক্তির ব্যবহারে দড় চাষির জমি এখন আর ফাঁকা পড়ে থাকে না। এ দিকে বছরভর ফলন দিতে গিয়ে কৃত্রিম রাসায়নিক সারের অত্যধিক ব্যবহার, বিরামহীন আবাদ ও স্বাভাবিক পুষ্টির অভাবে ভেঙে পড়তে লাগল জমির স্বাস্থ্য। কমে গেল উর্বরতা ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। জমিতে চাষ করে কৃষকের লাভের বদলে ক্ষতির পরিমাণ গেল বেড়ে।
এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জমিতে ধনচের চাষ করতে। বৈশাখ মাসে বোরো ধান উঠে যাওয়ার পরে জমি বেশ কিছু দিন ফাঁকা পড়ে থাকে। ধনচে চাষের জন্য এই সময়টুকুই কাজে লাগাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যের বিভিন্ন কৃষি খামারে মিলছে ধনচের বীজ। বাজারেও সামান্য দামে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বিঘা প্রতি চার কেজি বীজই যথেষ্ট।
বর্ধমানের সহকারি কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, ধনচে গাছের শিকড়ে এক ধরনের জীবাণু থাকে যারা প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন ধরে রাখতে পারে। বীজ ছড়ানোর চল্লিশ দিনের মধ্যে ওই গাছ বড় হয়ে যায়। তখন গাছ কেটে খেতে ফেলে রাখলেই ওই নাইট্রোজেন মাটির সঙ্গে মিশে যায়। কৃষিবিজ্ঞানীরা ধনচেকে সবুজ সারও বলেন।
২ মে থেকে রাজ্য জুড়ে ১৫ দিন ধরে মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে কৃষি দফতর। সেই কর্মসূচিতে ফের ধনচে চাষে চাষিদের উৎসাহিত করা হবে। কৃষিবিজ্ঞানী আফতাব জামান বলছেন, ‘‘জমি এবং ফসল বাঁচাতে এখন জৈব সার ছাড়া উপায় নেই। ”