Eviction Drive

তৃণমূল কার্যালয় অক্ষত, উচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন

ফুটপাতের দোকানদারদের একাংশের অভিযোগ, এ বছর লোকসভা ভোটে প্রান্তিক এলাকায় পিছিয়ে ছিল তৃণমূল।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৬
Share:

প্রান্তিকে ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়েছে দোকান। কিন্তু, অক্ষত তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

শাসকদলের কার্যালয় অক্ষত রেখেই পুজোর মুখে বোলপুরের প্রান্তিক এলাকায় চলল উচ্ছেদ অভিযান। শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের এই উচ্ছেদ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় বলেই কি উচ্ছেদ অভিযানে ছাড়, এমন প্রশ্ন তুলে বুধবার ক্ষোভ জানালেন স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। যদিও সরকারি জায়গায় দলীয় কার্যালয় নেই বলে দাবি ওই এলাকার তৃণমূল নেতার। উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “সব কিছু নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। সরকারি জায়গা দখল করে দলীয় কার্যালয় বা অন্য কিছু থাকলে সেটিও ভেঙে ফেলা হবে।”

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর পুরসভার অন্তর্গত হওয়ার আগে রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ছিল প্রান্তিক এলাকা। ২০১৩ সালে সেখানে তৃণমূলের ওই দলীয় কার্যালয় তৈরি করা হয়। বর্তমানে ওই এলাকাটি বোলপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। বোলপুর পুরসভার মতো শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের তরফেও প্রান্তিকে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে কিছুদিন আগে নোটিস দেওয়া হয়। তার পরেও ফুটপাত দখল করে ২৫-৩০টি খাবার ও অন্য দোকান ছিল বলে অভিযোগ।

Advertisement

এ দিন উন্নয়ন পরিষদের তরফে পে-লোডার নামিয়ে প্রান্তিকে রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা ওই দোকানগুলি ভেঙে ফেলা হয়। তবে, ওখানেই থাকা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙা পড়েনি। পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকার মানুষজন। পুলিশ গেলে পুলিশকর্মীদের ঘিরেও বিক্ষোভ হয়। যদিও পরে বড় পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় খাবারের দোকান ব্যবসায়ী রেখা গোস্বামী, সারথি দাসরা বলেন, ‘‘এর আগেও আমাদের দোকান ভাঙা পড়েছে। অথচ এখনও পুনর্বাসন মেলেনি। আমরা কোনও রকমে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। পুজোর মুখে সব শেষ হয়ে গেল!’’ ব্যবসায়ীদের একাংশ বলেন, ‘‘পুজোয় কাপড়জামা তো দূরের কথা, দু’বেলা ভাত জোটাব কী করে জানি না।’’

ফুটপাতের দোকানদারদের একাংশের অভিযোগ, এ বছর লোকসভা ভোটে প্রান্তিক এলাকায় পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সে কারণে স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি হুমকির সুরে বলে গিয়েছিলেন, এখানকার সমস্ত দোকান ভেঙে দেওয়া হোক। তার পরেই এসেছে উচ্ছেদের নোটিস। দোকান ভাঙায় কান্নায় ভেঙে পড়ে চা দোকানি মিঠু সাহা বলেন, ‘‘আমাদের দোকান ভাঙা হল। অথচ পার্টি অফিস ভাঙা হল না। দলীয় কার্যালয়ে মানুষ বিচার পেতে যায়। আজ এতদিন এই দলীয় কার্যালয় রয়েছে। মানুষ কী বিচার পেয়েছে!’’

কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘পুজোর আগে গরিব মানুষের পক্ষে না-দাঁড়িয়ে, নিজেদের দলীয় কার্যালয় রক্ষা করা হচ্ছে। মানুষ এর জবাব দেবেন।” বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শাসকদলের দলীয় কার্যালয় রেখে বাকি সমস্ত কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল।’’

প্রান্তিকের ওই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি সঙ্গীতা দাস বলেন, ‘‘আমি দোকান তুলে দেওয়ার কোনও হুমকি কখনও দিইনি।’’ তাঁর স্বামী, এলাকার
তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ ওরফে বাবু দাস। তাঁর দাবি, “কাউকে হুমকি দেওয়া হয়নি। সরকারি আদেশ মেনে উচ্ছেদ হয়েছে। আমাদের
কিছু করার নেই।’’ দলীয় কার্যালয় লিজের জমিতে রয়েছে বলেও তাঁর দাবি। যদিও স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশই জানাচ্ছেন, দলীয় কার্যালয় সরকারি জায়গার উপরেই তৈরি হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement