—ফাইল ছবি
দিল্লি ঘুরিয়ে দেখাব বলে এ বারই স্ত্রীকে প্রথম এখানে নিয়ে এসেছি। এই পরিস্থিতি হবে, ভাবতেই পারিনি!
বেশ কয়েক বছর হল কালীগঞ্জের বাড়ি ছেড়ে ভজনপুরার এই খাজুরি এলাকায় বাসা নিয়ে আছি। সোনা-রুপোর কাজ করি। এই এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেই থাকি। এমন ভয়াবহ অবস্থা কখনও হয়নি।
শনিবার থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করেছিল হঠাৎ। রবিবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। শুনতে পেলাম, রাস্তায় গাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সোমবার থেকে আর ভয়ে ঘর ছেড়ে বেরোতে পারিনি। শুধু এক বার ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া। আমরা যেখানে থাকি, ঝামেলার মূল কেন্দ্র থেকে তা মাত্র কিলোমিটার দুই দূরে। বৃহস্পতিবার নিয়ে চার দিন হয়ে গেল, কাজে যেতে পারছি না। মালিকও বারণ করেছে এখন যেতে।
কিন্তু বিপদে পড়ে গেলাম বুধবার। স্ত্রীর তেড়ে জ্বর চলে এল। ডাক্তার না দেখালেই নয়, ওষুধপত্র লাগবে। সেই শনিবার ঝামেলা শুরুর পর থেকেই গোটা এলাকার দোকানপাট সবই প্রায় বন্ধ। যে কয়েকটা খোলা ছিল, তা-ও সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গাড়িঘোরা প্রায় চলছেই না। যে ক’টা গাড়ি রাস্তায় রয়েছে তারা বিপুল ভাড়া চাইছে। ঘর থেকে বাইরে যেতেই ভয় করছিল। কিন্তু ওর জ্বর বাড়তে থাকায় ভয়ে-ভয়ে বেরোলাম। চারদিক তখন পুলিশে ছয়লাপ। একটা গাড়ি পেলাম, কিন্তু সে দ্বিগুণ হেঁকে বসল। উপায় কী, সেই ভাড়া দিয়েই ডাক্তারের কাছে যেতে হল আমাদের।
টিভিতে সবাই দেখছে, দিল্লির কী অবস্থা। বাড়ির লোক খুব ভয় পাচ্ছে, বাড়ি ফিরতে বলছে। কিন্তু এই সময়ে ফেরার ব্যবস্থা কী করে, সেটাই বুঝতে পারছি না। পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে প্রথম সুযোগেই দেশে ফিরব। মুশকিল হল, ঘরে যেটুকু খাবার মজুত আছে তাতেই এই ক’টা দিন চলছে। ফুরিয়ে গেলে কি খাব, জানি না।