খাদ্যসামগ্রী বিশেষ করে মাছ-মাংসের আগুন দাম নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। জেলার বাজারে মাছের দাম কেমন?
মাছ-মাংসের দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ ভাগের এক ভাগ উৎপাদন হওয়াতেই বাজারে দাম চড়ছে বলে মনে করছেন তিনি। যদিও নদিয়ার বিভিন্ন বাজারে এখন মাছের দাম স্বাভাবিক বলেই জানাচ্ছেন ক্রেতা থেকে খুচরো বিক্রেতা, পাইকারি ব্যবসায়ী প্রায় সকলেই।
বাজার ঘুরে জানা যাচ্ছে, মরসুমি আনাজের মতো মাছের ক্ষেত্রেও শীতকাল বা বর্ষাকালের ভেদ আছে। কিছু মাছ যেমন এই সময়ে পাওয়া যায় না। তেমনই প্রচুর সামুদ্রিক মাছ এই সময়ে বাজারে আসে। নানা রকম চাঁদা তাদের মধ্যে অন্যতম। চাঁদা, খয়রা চাঁদা, রূপ চাঁদা, ভোলা, পমফ্রেট ইত্যাদি মাছের আমদানি এই সময়ে প্রচুর হয়। সাধারণ ভাবে সামুদ্রিক মাছের দাম তুলনায় কমই হয়। ফলে বাজারের জোগান বা দামের ভারসাম্যে এখনও পর্যন্ত বিরাট হেরফের হয়নি বলেই বিক্রেতাদের অভিমত।
তবে রাজ্যে মাছের স্থানীয় উৎপাদনে ঘাটতির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত মৎস্যজীবী থেকে বিশেষজ্ঞ সকলেই। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, এ দায় কি সরকারের নয়? যে ভাবে পুকুর, খাল-বিল সহ যাবতীয় জলাভূমি নির্বিচারে ভরাট হচ্ছে তাতে মাছ উৎপাদন হবে কোথায়? মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণে আদৌ কি কোনও পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার? মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, যত দিন যাচ্ছে, মাছ ধরার জায়গা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। শহরে তো কথাই নেই, এখন গ্রামাঞ্চলেও উন্নয়নের নামে জলাভূমি বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণের ক্ষেত্রে সবার আগে বেছে নেওয়া হয় চিরকালীন এই জলাভূমিগুলিকে।
জলঙ্গির তিন প্রজন্মের মৎস্যজীবী ধরণী বিশ্বাস বলেন “নদীটাই তো মরে গেল চোখের সামনে! বর্ষার জলে কিছু মাছ হয়। অন্য সময়ে গেঁড়ি-গুগলিও মেলে না। এ বার বৃষ্টি হয়নি, তাই জাল তুলে রেখে মেলায় মেলায় ঘুরে খেলনা বিক্রি করছি। ও নদীতে কেউ আর মাছ ধরে না।”
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রাজ্যে মাছ উৎপাদনের পরিকাঠামো প্রায় শেষ। জলাশয়ের পরিমাণ কমতে কমতে এমন জায়গায় এসেছে যে লক্ষ্যমাত্রার এক পঞ্চমাংশ উৎপাদন হচ্ছে। এটাও বেশি দিন হবেনা। মৎস্য বিশেষজ্ঞ দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যের মাছ উৎপাদন ভেড়ি-নির্ভর। দুই মেদিনীপুর বা ২৪ পরগনায় বিরাট বিরাট ভেড়িতে মাছের চাষ হচ্ছে। কিন্তু সেই মাছের যা উৎপাদন ব্যয় তাতে বাজারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তুলনায় অন্ধ্রের মাছ সস্তায় বিকোচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দ্রুত পরিকল্পনা করতে হবে।”
প্রায় একই সুরে কথা বলছেন মাছের পাইকারেরাও। তাঁদের মতে, রাজ্যে দেশি মাছের উৎপাদনের জায়গাই নেই। এ রাজ্য থেকে মাছের ধানি কিনে নিয়ে গিয়ে দক্ষিণের রাজ্যগুলো চাষ করে ফের এ রাজ্যকেই বিক্রি করছে। বিপুল মুনাফা করছে। অথচ এখানে ক্রমশ কমছে জলাশয়। পাইকারি মৎস্য বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্রতি দিন বিন পাতিপুকুর, হাওড়া, শিয়ালদহ, শ্রীরামপুর,বারাসত, দুর্গাপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি— এমন বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য ট্রাকে মাছ আসে বলেই রাজ্যের মানুষ মাছ খেতে পাচ্ছেন। তাঁরা জানান, ১৯৯০ সাল থেকে আমদানি শুরু হয়েছে। এখন গোটা রাজ্য বড় মাছের জন্য সম্পূর্ণভাবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঘাটতি সুদূর ভবিষ্যতেও পূরণ হবে না।