কুপির চাহিদা। নিজস্ব চিত্র।
ঝড়়ের পূর্বাভাসের পরেই নবদ্বীপ শহরের বিভিন্ন দোকানে, খুচরো এবং পাইকারি বাজারে হ্যারিকেন, লম্ফ, কুপি চুটিয়ে বিক্রি হচ্ছে। আসন্ন ঝড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কাতেই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি রাখছেন অনেকে। গত বারের আমপানে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ইনভার্টারও শেষ পর্যন্ত অকেজো হয়ে গিয়েছিল। তাই এ বার আগে থেকে কুপি ও লম্ফের উপর আস্থা রাখছে মানুষ।
শনি-রবি-সোম, এই তিন দিনে দেড় ডজনের বেশি হ্যারিকেন বিক্রি করেছেন বাজার রোডের সঞ্জীব কুণ্ডু। রবিবারেই কেরোসিনের ছোট বাতি-র স্টক ফুরিয়ে গিয়েছে কুন্তল ঘোষের। শুনতে অবাক লাগলেই এটাই সত্যি। অথচ, এমনিতে শহরের মানুষ হ্যারিকেনের ব্যবহার কার্যত ভুলেই গিয়েছিলেন। ঝড় তা নতুন করে মনে পড়়াল।
নবদ্বীপ বাজার রোডের তিনপুরুষের বাসনপত্রের ব্যবসা সঞ্জীব কুণ্ডুর। তিনি বলেন, “শনিবার সকালে কিছটা অবাকই হয়েছিলাম যখন দেখলাম পরপর চারটে হ্যারিকেন বিক্রি হয়ে গেল। এবং যারা কিনলেন তাঁরা সকলেই শহরের মানুষ। দূরের এক খুচরো বিক্রেতা তাঁর দোকানে বিক্রি করার জন্য একসঙ্গে গোটা ছ’য়েক নিয়ে গেলেন।”
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এমনিতে চৈত্রমাসে কালবৈশাখীর আগে গ্রামের মানুষ কিছু হ্যারিকেন কেনেন। যাঁদের আমের কারবার তাঁদের মধ্যে এই ঝড়বৃষ্টির সময় হ্যারিকেন ব্যবহারের চল আছে। বাজারে দুই রকমের হ্যারিকেন বিক্রি হয়। ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হয় স্টিলের নিকেল করা ঝকঝকে হ্যারিকেন, আর ২৫০ টাকা দামের রং করা হ্যারিকেন। শহরের মানুষ অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শে সেঁক দেওয়ার জন্যও হ্যারিকেন কেনেন। তবে একসঙ্গে এত বিক্রি হয় না।
নবদ্বীপ তহবাজারের ভিতরে দোকান কুন্তল ঘোষের। তিনি বলেন, “শুধু রবিবারেই ছোট কেরোসিনের বাতি একডজন শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু কুপি লম্ফ আছে। কেরোসিনের ছোট বাতি বিক্রি হয়েছে এক একটি ৬০ টাকা করে। লম্ফ ২০ টাকা। গ্রামাঞ্চলের দোকানদারেরা পাইকারদের থেকে প্রচুর পরিমাণে লম্ফ নিয়ে যাচ্ছেন।’’
পুরনো হ্যারিকেন প্রচুর মেরামতও হচ্ছে। অমিতকুমার সাহা বাতি মেরামত করেন। বললেন, “গত দু’-দিনে অন্তত গোটা কুড়ি হ্যারিকেন মেরামত করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় তলা ক্ষয়ে গিয়ে তেল পড়ছিল। ৭০-৮০ টাকা মতো খরচ পড়ছে মেরামত করতে।’’