প্রতীকী ছবি।
কবে মিলবে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ? অ্যাকাউন্টে কবে আসবে টাকা? অপেক্ষায় আরও কঠিন হয়েছে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত চাষির দিনযাপন। শুকোচ্ছে না আর্থিক ক্ষতির ক্ষত। বাঁধ ভাঙছে ধৈর্যের। অনেক জায়গায় প্রকাশ পাচ্ছে ক্ষোভ।
আমপানের পর দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও অপেক্ষা যায়নি। ঝড়ে নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাট থেকে পেঁপে, পান থেকে আম, কলা থেকে কাঁচা আনাজ তছনছ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য দেড়শো কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নদিয়া জেলার জন্য বরাদ্দ হয়েছে সতেরো কোটি টাকা। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রায় দেড় হাজার মৌজার কমবেশি তিন লক্ষ কৃষক এতে উপকৃত হবেন। ইতিমধ্যেই স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে নদিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ জমা পড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন নদিয়ার সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী।
কিন্তু অভিযোগ, সেই টাকা কবে, কী ভাবে পেতে পারেন সেই বিষয়ে কিছুই জানেন না এলাকার অধিকাংশ চাষি। কৃষি দফতরেরই এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জেলার জন্য মোট সতেরো কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কাদের, কী ভাবে কত টাকা দেওয়া হবে সেই নির্দেশিকা এখনও হাতে আসেনি। সবচেয়ে বড় কথা, কবে টাকা মিলবে তাও জানেন না চাষিরা।
হোগলবেড়িয়া র কলা চাষি দীপক প্রামাণিক জানান আমপানের ঝড়ে তাঁর পাঁচ বিঘা জমির প্রায় সাড়ে পাঁচশো কলাগাছ ভেঙে গিয়েছে। তারপর থেকে পঞ্চায়েত সদস্য বা কোনও জনপ্রতিনিধি, ব্লক প্রশাসন বা কৃষি দফতরের কেউ জমিতে আসেননি বা খোঁজ নেননি। কী ভাবে ক্ষতিপুরণের টাকা মিলবে জানা নেই।
একই অভিযোগ গোয়াস গ্রামের এক পেঁপে চাষি প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাসের। তিনি বলেন “আমপানে এক বিঘা জমির দু’শোর উপরে গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বারো দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কৃষি দফতর বা অন্য কোনও সরকারি লোকজন জমি পরিদর্শণে আসেননি। ক্ষতিপূরণ কীভাবে পাওয়া যাবে সেটাও পঞ্চায়েত কিংবা ব্লক অফিস থেকে এখনও জানানো হয়নি।”
কৃষিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী জানান, সোমবার রাতে কিছু অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেও গিয়েছে। তবে কত জনের অ্যাকাউন্টে তা এসেছে তা তিনি জানাতে পারননি। তিনি আরও জানিয়েছেন, কৃষকদের সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারের ‘কৃষকবন্ধু’ বলে যে পরিকল্পনা চালু আছে তাতে জেলার নথিভূক্ত কৃষকদের নামের একটি তালিকা তৈরি করাই আছে। স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কাছে জেলার তরফে কৃষকদের সেই ডেটাবেস পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অর্থ সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে।
তার প্রেক্ষিতে নদিয়া জেলা কৃষক সভার সম্পাদক মেঘলাল শেখ বলেন, “কৃষকবন্ধু প্রকল্পে যাঁদের নামে নেই তাঁরা কেন সহায়তা পাবেন না। আমপান বেছে-বেছে শুধু কৃষকবন্ধুদের ক্ষতি করেছে এমন তো নয়। বাকি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য কি সরকারের কোনও দায়িত্ব নেই?’’