অভিযোগকারিণী। নিজস্ব চিত্র
দলীয় নেতা-কর্মীদের কাটমানি নেওয়ার প্রশ্নে সতর্ক করা এবং নিলেও তা ফিরিয়ে দেওয়ার দাওয়াই দিয়েছিলেন দলনেত্রী। প্রশাসনিক স্তরেও এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লিফলেট বিলি থেকে নেতাদের বৈঠক, গ্রাম ঘুরে মাইকে ঘোষণা থেকে পুলিশের নজরদারি— তৃণমূলের মেজ-সেজ নেতাদের তোলাবাজি রুখতে প্রশাসনকে কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি। এত দিন মুখ বুজে থাকা গ্রামীণ মানুষের কাটমানি নেওয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ যখন প্রায় নিত্য ঘটনায় দাঁড়িয়েছে, লকডাউনের অমোঘ অনুশাসন শুরু হয়েছিল তখনই। ফলে কিঞ্চিৎ ধামাচাপ পড়ে গিয়েছিল বিষয়টি। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের এই ‘স্বভাব’ যে সহজে যাওয়ার নয়, আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি বণ্টন শুরু হতেই তা ফের সামনে এসে পড়েছে। যা দেখে দলেরই এক তাবড় জেলা নেতার মন্তব্য, ‘‘কাটমানির নেওয়ার এই স্বভাব সহজে যাওয়ার নয়। সামনে নির্বাচন, এতে যে দলের ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তাঁরা কেউ ভাবছেন না।’ কাটমানির সাম্প্রতিক অভিযোগটি জলঙ্গির ফরিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এক মহিলার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকায় ভাগ বসানো। নালিশ, কাটমানি না দিলে ক্ষতিপূরণ অধরাই থেকে যাবে। কলিকাহার গ্রামের সাহানারা বেওয়ার অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্য ফুলসুরা বিবি ক্ষতিপূরণের কুড়ি হাজার টাকা থেকে অর্ধেক কেটে নিয়েছেন।’’ ফুলসুরা অবশ্য বলছেন, ‘‘অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।" জলঙ্গির বিডিও কৌস্তুভকান্তি দাস স্বীকার করেছেন অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে।’’
জলঙ্গির কলিকাহারা গ্রামে রাস্তার পাশে এক চিলতে জমিতে ছোট্ট পাটকাটির বেড়া দেওয়া টিন-টালির ঘর সাহানারার। নিঃসন্তান বিধবা মা’কে নিয়ে সেই ঘরেই থাকেন। আমপানে তাঁর সেই ঘর গুঁড়িয়ে যায়। সাহানারার দাবি, ঝড়ের দিনকয়েক পরেই বাড়িতে এসে পঞ্চায়েত সদস্য ফুলসূরা বিবি তাঁর যাবতীয় নথি এবং ভাঙা ঘরের ছবি তুলে জানান, সাহায্য আসবে। দিন দশেক আগে, সেই সাহায্যের অর্থ ঢোকে ব্যাঙ্কে। সাহানারাকে নিয়ে গিয়ে টিপ ছাপ দিয়ে টাকাও তোলা হয়। সাহানারার দাবি, ‘‘ব্যাঙ্ক কর্মীরা আমার হাতে নগদ কুড়ি হাজার টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু বাইরে বেরোতেই ফুলসুরার স্বামী সাজিদুল শেখ চিলের মতো ছোঁ মেরে সেই টাকাটা নিয়ে বলে, এটা অন্য প্রকল্পের টাকা, তোমার একাউন্টে ঢোকানো হয়েছিল।’’ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় শোরগোল হতেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের পক্ষ থেকে নগদ ২ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাহানারার বাড়িতে। সাহানারা বলেন, ‘‘আমি তাতেও হাল ছাড়িনি। পড়শিদের সব জানাই। শুরু হয় হট্টগোল, এর পরে আরও ৮ হাজার টাকা পাঠানো হয় আমাকে। কিন্তু বাকিটা ওরা নিয়ে নিয়েছে।’’ বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগও জানান তিনি এ অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। জলঙ্গি জুড়ে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠছে অহরহ। যা মাঝপথেই ধামাচাপা পড়ে যায়। জলঙ্গির সিপিএম এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইমরান হোসান বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছেও অনেকে এসে বলেছেন তৃণমূল নেতাদের এই কাটমানি নেওয়ার ঘটনা, কিন্তু শাসকের ভয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করতে রাজি হচ্ছে।’’ জলঙ্গি ব্লক তৃণমূল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলছেন,‘‘ অভিযোগ পেয়েছি, দলগতভাবে ওই ঘটনার তদন্ত করা হবে।’’