প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
খাতায়-কলমে বর্ষাকাল। অথচ জল নেই নদী, খাল, বিলে। বাজারে দেখা মিলছে না দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছেরও। সামান্য পরিমাণে আমদানি হওয়ায় চড়া দামে বিকোচ্ছে ল্যাটা, পুঁটি, পাঁকাল, আড়, মাগুরের মতো দেশি মাছ।
মৎস্যজীবীরা বলছেন, বর্ষাকালে পুঁটি, ল্যাটা, খলসে, মৌরলা, পিউলি, ছলং, পাঁকাল, খয়রা-সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জালে ওঠে। এই সময় জলের রুপোলি শস্য ইলিশের পাশাপাশি এই সব দেশি প্রজাতির মাছ খেয়েও স্বাদ বদলান আম-বাঙালি। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত তাঁদের পাতে দেশি প্রজাতির ওই সমস্ত মাছ দেখা যাচ্ছে না। কোনও কোনও জলাশয়ে কিছু দেশীয় প্রজাতির মাছ মিললেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। হরিহরপাড়া বাজারের এক মাছ বিক্রেতা অরবিন্দ হালদার বলেন, ‘‘খাল, বিলে জল নেই। মৎস্যজীবারাও দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরতে উৎসাহ পাচ্ছেন না। সামান্য কিছু মাছ যা বাজারে আসছে তার দামও আকাশছোঁয়া।’’ যাদব হালদার নামে এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘খাল, বিল, নদীতে জল কম। বিলে, নদীতে, পাট জাঁক দেওয়া হচ্ছে। গত বছর পাট জাঁক দেওয়ার কারণে মাছের মড়ক দেখা দিয়েছিল। যার ফলে এ বছর অনেক প্রজাতির মাছ মিলছে না।’’
বহরমপুর, হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গির বিভিন্ন বাজারে মাঝারি মাপের পুঁটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি। ল্যাটা মাছের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। খয়রা, পিউলি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। জাল (ছোট চিংড়ি) বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। শ্রাবণেও পর্যাপ্ত পরিমাণে মিলছে না পুঁটি, ল্যাটা, পাঁকাল, খয়রার। দেশীয় প্রজাতির মাছের জোগান কম হওয়ায় ক্রেতারা ঝুঁকছেন রুই, কাতলার দিকে। জেলার বিভিন্ন বাজারে মাছের ওজন অনুযায়ী রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, বাটা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। যদিও হাওড়া থেকে আসা (আসলে অন্ধ্রপ্রদেশের) রুই বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে। নওদার বাসিন্দা সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘আগে বর্ষাকালে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ মিলত। দামও থাকত নাগালের মধ্যে। বর্তমানে ল্যাটা, পুঁটির যা দাম, পাতে তোলাই কঠিন।’’
কেন দেশীয় প্রজাতির মাছের জোগান কম? মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ বৃষ্টিপাত কম হওয়া। তাছাড়া, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। নদী ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ সূর্য্যেন্দু দে বলেন, ‘‘বর্ষাকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাছের প্রজননের জন্য আদর্শ। বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ও জলাশয়ের ধরন পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হারিয়ে যাচ্ছে। জলদূষণের জেরেও অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলির উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।’’