চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করল বাম-কংগ্রেস জোট। — নিজস্ব চিত্র।
এক শুক্রবার মধ্য রাতে সিপিএম এবং কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকের চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন জয়ী সদস্য। পরের শুক্রবার সেই তাঁদেরই সমর্থনে তৃণমূলকে হারিয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করল বাম-কংগ্রেস জোট। যদিও তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই ৩ সদস্যের দাবি, তাদের অপহরণ করে যোগদান করানো হয়েছিল। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকের ২০ আসন বিশিষ্ট চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টি আসন যায় কংগ্রেসের দখলে। তৃণমূল পায় সাতটি আসন। বামফ্রন্টের তরফে আরএসপি প্রার্থীরা দু’টি আসনে জয়ী হন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ২৬৮ নম্বর বুথের আরএসপি সদস্য কবিরুল মণ্ডল, ২৫৬ নম্বর বুথের কংগ্রেস সদস্য আব্দুর রব শেখ এবং মনিরুল মালিত্যা, ২৬২ নম্বর বুথের এক কংগ্রেস সদস্য একসঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেন। এর ফলে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং তৃণমূলও ওই পঞ্চায়েতে সমান শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ওই তিন পরিবারের অভিযোগ, গত শুক্রবার অর্থাৎ ৪ অগস্ট রাতে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার একটি বেসরকারি হোটেল থেকে কংগ্রেস প্রতীকে জয়ী দুই পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুর এবং মনিরুল, অন্য দিকে আরএসপির কবিরুলকে অপহরণ করা হয়। তিন জয়ী সদস্যদের পরিবারের আরও অভিযোগ, শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ খাবার খেতে হোটেল থেকে বাইরে বার হলে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে সেখান থেকে তাঁদের অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে। পরিবারের সদস্যেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও সেই তিন সদস্যের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। জেলা পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত তিন জনকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বহরমপুর জেলা আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে প্রথমে বহরমপুর থানার পুলিশের হেফাজতে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাঁদের নওদা থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় ওই তিন সদস্যই প্রধান পদপ্রার্থীকে সমর্থন করেন।
এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, “আদালতের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছিল। অপহৃত ওই তিন ব্যক্তিকে তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে তারা। আজ (শুক্রবার) বোর্ড গঠনের সময় তাঁরা তাঁদের দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন।”
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শফিউজ্জামান এই বিষয়ে বলেন, “ওই তিন জন তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। তাই তাঁদের দলে নেওয়া হয়েছিল। ভয় দেখানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।”