—ফাইল চিত্র।
দোল মানেই তুমুল ভিড় নবদ্বীপ ও মায়াপুরে। পৃথিবীর একশো পঁচিশ দেশের লাখো মানুষের যে ভিড় এত দিন ছিল উৎসবের অলঙ্কার, এ বার কি সেই ভিড়কেই ভয় পাচ্ছে এই দুই তীর্থশহর? করোনাভাইরাসের ছোঁয়াচ বিদেশ উজিয়ে এ দেশেও পৌঁছেছে। দোলের মতো যে উৎসবের আবশ্যিক অঙ্গ ভিড় ও শারীরিক স্পর্শ তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এই দুই শহরে আগতদের কেউ ভাইরাসের বাহক কি না, তা দেখার কি আদৌ কোনও ব্যবস্থা হয়েছে?
হয়নি। এবং তাতেই সংশয়ের মেঘ জমেছে মায়াপুর বা নবদ্বীপে। যদিও দোলের দিন নবদ্বীপ বা মায়াপুরের মঠ-মন্দিরে আবির বা রং খেলা নিষিদ্ধ, মহাপ্রভুর জন্মদিন হিসেবেই দিনটি উদ্যাপিত হয়, তবুও বিপুল পরিমাণ লোকসমাগমও যে বিপদের কারণ হতে পারে! এই বিদেশিদের একটা বড় অংশ আসেন মায়াপুরে ইস্কন মন্দিরে। এই মুহূর্তে অন্তত হাজার দেড়েক বিদেশি আছেন সেখানে। আর গঙ্গার পশ্চিম পারে নবদ্বীপের জলমন্দির ও কেশবজি গৌড়ীয় মঠ মিলিয়েও বিদেশির সংখ্যা অনায়াসে হাজার ছাড়িয়ে যায়।
ফলে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে লাখো মানুষের ভিড় জমে গঙ্গার দু’পারে। বছরভরের মতো বাণিজ্যে পুষ্ট হয় স্থানীয় অর্থনীতি। শুধু তা-ই নয়, যে সব মন্দিরে বিদেশিরা আসেন তাদের কাছেও বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মন্দিরের শ্রীবৃদ্ধিতে বিদেশিদের আনুকূল্যের বিরাট ভূমিকা থাকে। এখন সেই ভিড়ই যদি আতঙ্কের কারণ হয়, তা হলে দোলের রঙ ফিকে হতে বাধ্য বইকি।
তবে দোলে আসা বিদেশি মানেই যেমন মারণ ভাইরাসের বাহক নন, এক-আধ জন বিপদের কারণ হতে পারেন না, তা-ও নয়। যেমন অন্যত্র সংক্রামিত হয়ে আসা দেশীয় মানুষও রোগ ছড়াতে পারেন।
সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া সূত্রে প্রাপ্ত করোনা সংক্রান্ত নানা ঠিক-ভুল খবর নিয়ে চর্চার শেষ নেই উৎসবের শহরে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নবদ্বীপ বা মায়াপুরে তেমন কোনও চোখে পড়ার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। কোনও স্বাস্থ্যপরীক্ষা বা চিহ্নিতকরণ শিবির খোলা হয়নি। ইস্কন ও অন্য মঠ-মন্দিরে থাকা ভক্তেরা ছাড়াও রোজই শহরের বাইরে থেকে হাজার-হাজার মানুষের যাতায়াত চলছে অন্তত গত পনেরো দিন ধরে। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে বা মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই।
ইস্কন মায়াপুরের পিআরও ম্যানেজার অলয়গোবিন্দ দাস মেনেই নেন, “নবদ্বীপ-মায়াপুরের চারদিকে হাজার-হাজার মানুষ ঘুরছেন। এঁদের কেউ যে করোনাভাইরাস বহন করছেন না এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ওঁরা এসেছেন। কিন্তু এঁদের পরীক্ষা করার কোনও ব্যবস্থা আমাদের নেই। আমরা সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় আছি।’’ দুই শহরের বিভিন্ন মঠমন্দিরে সদ্য দোলের পরিক্রমা হয় সদ্য শেষ হয়েছে বা শেষ হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার অলয়গোবিন্দ বলেন, ‘‘এখনও আসল দোল বাকি। আমরা সরকারের কাছে স্বাস্থ্য শিবিরের আবেদন জানাচ্ছি।” তবে তাঁর আশা, “হরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে মানুষ এই সব বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।”
যদিও কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয়নি, নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার দাবি করেন, “করোনার জন্য কী বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা জানতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলছি।” নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এখনই এত কিছু ভাবতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, “এ রাজ্যে এখনও কোনও করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হয়নি।”
সুতরাং অপেক্ষা। আগে তো রাজ্যে করোনা-সংক্রমণ ঘটুক!