জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, এই ছবি এখন নিত্যনৈমিত্তিক। নিজস্ব চিত্র
কৃষ্ণনগরের জ্যোতিব্রত সান্যাল তাঁর দল নিয়ে দুঃস্থ মানুষের কাছে প্রয়োজনীর ওষুধ ও খাবার তুলে দেওয়ার কাজ করছেন এই সময়ে। তিনি বলেন, ‘‘সারা বছর আমরা কাজটা করে থাকি। এখন দেখছি হঠাৎ করেই সাহায্যকারীর ঢল নেমেছে রাস্তায়। কিন্তু তাদের বেশির ভাগকেই শহরের বাইরে বেরোতে দেখা যাচ্ছে না।’’ ‘‘শুধুমাত্র ছবি তুলে পোস্ট করার জন্যও সাহায্য করছেন কেউ কেউ।’’— ক্ষোভপ্রকাশ করেন জ্যোতিব্রত।
অপরিকল্পিত সাহায্য দানের কারণে এক এক জন যে অনেক ক্ষেত্রেই একই দিনে একাধিক বার সাহায্য পাচ্ছেন তা বোঝা গেল শান্তিপুরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য রণপ্রসাদ ভট্টাচার্যের কথায়।
তিনি বলেন, ‘‘সারা বছর আমরা শান্তিপুরের রাস্তার ধারে ভবঘুরেদের রান্না করা খাবার দিয়ে থাকি। লকডাউনের সময়ে দেখছি একাধিক দল এসে খাবার দিয়ে গিয়েছে। অনেকে তো মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরের সামনে কাগজের থালায় করে রান্না করা খাবার রেখে চলে গিয়েছে। সে খাবার সেখানেই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এক চরম অব্যবস্থা।’’
একই সুরে শান্তিপুরের সুমিত হালদার বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে কয়েক জন বন্ধু মিলে শান্তিপুরের কুঠিরপাড়া এলাকার দুঃস্থ তাঁতশিল্পী ও ভ্যানচালকদের বাড়ি বাড়ি সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলাম। এখন দেখি সেখানে সাহায্য দানের ভিড় লেগে গিয়েছে। এমনও শুনছি, সাহায্য দিয়ে আসার পর এক তাঁতশিল্পী সাহায্যের চাল বিক্রিও করে দিয়েছেন।’’
তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাহায্য ফিরিয়ে দেন, অন্য কাউকে দিতে বলেন— এমন মানুষও আছেন। তা জানা গেল কৃষ্ণনগরের মানসী দাসের কাছে। তাঁর দল গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুঃস্থ লোকশিল্পীদের হাতে সাহায্য তুলে দিচ্ছে। মানসীর উপলব্ধি, ‘‘লোকশিল্পীদের হাতে এখন কাজ নেই। অনেক লোকশিল্পী আছেন যাঁরা কারও কাছে সহজে হাত পাততে পারেন না। বড় কঠিন সময় যাচ্ছে তাঁদের।’’
চাঁদপুরে আদিবাসী লোকশিল্পীদের হাতে সাহায্য তুলে দিতে গেলে তাঁদের মধ্যেই কয়েক জন মানসীকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা আজ ক্লাব থেকে সাহায্য পেয়েছি, তুমি এটা অন্যদের দাও যারা পায়নি।’’
সাহায্যের সমবণ্টনের উদ্দেশ্যে কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রাক্তনীরা কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় সাহায্য দিতে যাওয়ার আগে বাকি যে সব সংগঠন সাহায্য দিচ্ছে, তাদের ফোন করে ওখানে কেউ যায়নি নিশ্চিত হচ্ছে। তার পরেই যাচ্ছে। কলেজিয়েটের প্রাক্তন ছাত্রেরা আবার রোজ সকালে এলাকায় ঘুরে বাড়ি চিহ্নিত করে এসে দুপুরে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে সেই সব বাড়িতে।
চিকিৎসক যতন রায় চোধুরী একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে সেখানে সাহায্য দিতে ইচ্ছুক বা দিচ্ছেন এমন সবাইকে যুক্ত করেছেন। সবাইকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যাতে সাহায্য ঠিক ভাবে ঠিক লোকের হাতে পৌঁছয়।
সবাই চেষ্টা করছেন। তবে দীর্ঘ দিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে সবার ভাঁড়ারেই টান পড়বে, সাহায্য দানে উৎসাহী মানুষও কমে আসবে, সে আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। (শেষ)