প্রতীকী ছবি
কর্নাটকের মহীশূরের জেএসএস স্টুডেন্টস নার্সিং হস্টেলে করিমপুরের চার ছাত্রী-সহ রাজ্যের মোট উনিশ জন নার্সিং-ছাত্রী আটকে রয়েছেন। সরকারি হেল্পলাইনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। কবে, কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই ছাত্রীরা এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন।
লকডাউনের জেরে দেশ-বিদেশে আটকে রয়েছেন রাজ্যের বহু মানুষ। পরিযায়ী শ্রমিক থেকে ছাত্রছাত্রী, রোগী থেকে পর্যটক সকলেই বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। গত সপ্তাহে দু’দিন ট্রেনে করে রাজস্থানের আজমের শরিফ থেকে ৫ মে ১১৮৮ জন ডানকুনি স্টেশনে ও তার পরের দিন ৬ মে কেরালার আন্নাকুলাম থেকে বহরমপুরে ১১৩২ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ফেরানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রাজস্থানের কোটা থেকে বাসে করেও রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীকে আনা হয়েছে। তবে এখনও অনেক ছাত্রছাত্রী ভিন্ রাজ্যে আটকে রয়েছেন। এ দিন যেমন মহীশূরে আটকে থাকা জেলার নার্সিং ছাত্রীদের খোঁজ মিলেছে।
মহীশূরের হস্টেলে গৃহবন্দি অবস্থায় থাকা করিমপুরের ছাত্রী সংহিতা রায় ফোনে জানান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, কলকাতা, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে রাজ্য থেকে মোট উনিশ জন ছাত্রী সেখানে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন প্রায় আট মাস আগে। গত ২২ মার্চ প্রথম দফার লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই তাঁদের কলেজ বন্ধ। হস্টেলের ঘরের মধ্যেই রয়েছে ওই ছাত্রীরা। খাবার পেলেও উৎকণ্ঠায় পড়াশোনা হচ্ছে না। তাঁরা সকলেই এখন নিজের নিজের বাড়ি ফিরতে চান।
হস্টেল কর্তৃপক্ষও তাঁদের বাড়ি ফেরানোর কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কী ভাবে ফিরবেন, সে বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না। ওই নার্সিং ছাত্রীর কথায়, “আর ভাল লাগছে না। পড়াশোনা সব বন্ধ। এখন কবে, কী করে বাড়ি ফিরতে পারব, সেটাই ভেবে যাচ্ছি। এই বিষয়ে কর্ণাটক সরকারের কাছেও আবেদন জানিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের কাছে কোথায় আমাদের বিষয়ে জানাব, তা-ও বুঝতে পারছি না।” আরেক নার্সিং-ছাত্রী জানান, বাড়ির সদস্যরা চিন্তা করছেন। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হলেও এই মহামারি পরিস্থিতিতে সকলে বাড়ি ফিরে যেতে চান। উপায় না দেখে ওই নার্সিং ছাত্রীদের বাড়ির লোকজন সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। তবে তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভিন্ রাজ্যে আটকা পড়া ছাত্রীরা।
বীরভূমের বাসিন্দা নার্সিং ছাত্রী অনন্যা কর্মকার বলেন, “নিশ্চিত নই, তবে শুনছি শ্রমিকদের নিয়ে একটা ট্রেন রাজ্যে যেতে পারে। কিন্তু আমরা উনিশ জন মেয়ে কি ওই ট্রেনে যেতে পারব? কী ভাবে ট্রেনের টিকিট পাব, তা-ও জানি না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।”
করিমপুরের বাসিন্দা এক নার্সিং-ছাত্রীর অভিভাবক হরিদাস রায় বলেন, “আমরা দিশেহারা। প্রশাসনের কোথায় জানালে মেয়ের ফেরার ব্যবস্থা করা যাবে, জানা নেই। তবুও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। অপেক্ষা করছি।”
নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীদের কোনও এক জনের ফোন নম্বর দিলে তাঁদের সঙ্গে এবং ওই রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।’’