Coronavirus Lockdown

‘ভাড়া নেই, ট্রেন দিলেও কী হবে’

স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া এক বেলা ডাল আর রুটিতেই পেট ভরাতে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু মাঝে প্রায় চার দিন বন্ধ হয়ে যায় সেই খাবারও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২০ ০২:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

পঞ্জাবের লুধিয়ানার গ্যাসপুরা এলাকায় আটকে পড়েছেন হরিহরপাড়ার ১৩০ জন শ্রমিক। কাছে নেই পর্যাপ্ত টাকা, মিলছে না খাবার। এক প্রকার অনাহারে অর্ধাহারেই দিন কাটছে তাঁদের। ঘরে ফিরতে চাইছেন তাঁরা। কী করে ফিরবেন, জানেন না। ট্রেন যদি দেওয়াও হয়, ভাড়ার টাকা নেই। তা ছাড়া অধিকাংশই নিরক্ষর, ফলে ঘরে ফেরার জন্য অনলাইনে আবেদন করতেও পারছেন না বলে জানান তিনি।

Advertisement

হরিহরপাড়ার খলিলাবাদ গ্রামের বছর পঞ্চান্নর জাব্বার শেখ কয়েক বছর ধরেই পঞ্জাবের লুধিয়ানায় এক ইলেকট্রিকের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানায় কাজ করেন। একই কারখানায় হরিহরপাড়ারই ঝাঝা, রুকুনপুর, ডাঙাপাড়া, কোমনগর সহ বিভিন্ন এলাকার এলাকার কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। ইদ পরবের আগে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। মাস খানেক থাকার পর ফের তারা পাড়ি জমান কাজের যায়গায়। মাস কয়েক আগে জাব্বার তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, তাঁদের বৌ এবং এক নাতিকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন পঞ্জাবে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আনতে এ রকম অনেকেই পরিবার সহ রয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। পরিবারের মহিলারাও নাট বল্টু প্যাকেট করার কাজ করে থাকেন। কোনও কোনও মহিলা রান্নার কাজ করেন, কেউ পরিচারিকার কাজ। এ ভাবেই পুরুষেরা দিনে গড়ে ৫০০-৫৫০ টাকা এবং মহিলারা ২০০ টাকা আয় করে থাকেন।

কিন্তু লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে কারখানা। রুজিতে তালা পড়েছে মুর্শিদাবাদের েই সন্তানদেরও। প্রায় দেড় মাস তারা আটকে ভিন্ রাজ্যে। কাছে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা। নেই খাবার। স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া এক বেলা ডাল আর রুটিতেই পেট ভরাতে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু মাঝে প্রায় চার দিন বন্ধ হয়ে যায় সেই খাবারও। ফলে প্রায় তিন দিন না খেয়েই কাটাতে হয় তাঁদের। এক টুকরো বিস্কুট আর জল খেয়েই রোজা রাখা বা ইফতার করতে হচ্ছে সামসুল শেখ, জরিনা বিবি, জাব্বার শেখদের।

Advertisement

লুধিয়ানার গ্যাসপুরার তিন নম্বর বিজলি গলিতেই এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন হরিহরপাড়ার প্রায় ১৩০ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু মহিলা ও শিশু।

হরিহরপাড়ার ঝাঝা গ্রামের বাসিন্দা পঞ্জাবে আটকে পড়া শ্রমিক সামসুল শেেখ বলেন, ‘‘আমরা এখানে প্রায় ১৩০ জন আটকে আছি। চার দিন পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে কিছুটা আটা, ডাল আর চিনি পেয়েছি।’’

পঞ্জাবে আটকে পড়া মহিলা শ্রমিক জরিনা বিবি বলেন, ‘‘গ্রামে জমিজমা কিছু নেই। তাই সবাই ভিন্ রাজ্যে খাটতে এসেছি। লকডাউনে কাজও নেই, টাকাও নেই। বিস্কুট আর জল খেয়ে রোজা করতে হচ্ছে। কাল কিছুটা আটা, চিনি আর ডাল পেয়েছি। রুটির সাথে একবেলা ডাল, একবেলা জলে চিনি গুলে খাচ্ছি।’’ তবে শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। শ্রমিক পরিবারে দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী পাঁচ-ছয় জন শিশু রয়েছে। তাদের বিস্কুট বা দুধ কিনে দেওয়ার সামর্থ্যটুকুও নেই তাঁদের। হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু স্যানাল বলেন, ‘‘আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement