চিন্তাগ্রস্ত জুয়েল। নিজস্ব চিত্র
প্রতিদিন ভোর হলেই বাড়ির পাশের বাগানে নিজের পোষ্যকে বেঁধে রাখেন তিনি। আমবাগানের ছায়ায় বসে জাবর কাটে আর ঝিমোয় জুয়েল শেখের আদরের ঘোড়া ‘বাদল’।
টাঙ্গার ভার বয়ে বাদলের পিঠের চামড়ায় স্থায়ী দাগ পড়ে গিয়েছে। তাতে হাত বোলাতে বোলাতে বাদলের প্রভু জুয়েল বললেন, ‘‘বাদলকে প্রতিদিন দু’বেলা ধানের তুস, ছোলা ও গুড় মাখা খাবার দিতে হয়। এ ভাবে আর কিছুদিন চললে ওর (বাদল) খাবার কেনার টাকাটুকুও জুটবে না।’’ লালবাগের বাসিন্দা জুয়েল টাঙ্গা চালান। টোটো এবং অটোর রমরমায় তাঁর টাঙ্গার রোজগার কমে গেলেও কোনওরকমে সংসার চলে যায়। জুয়েলের স্ত্রী নাজেমা বিবি আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘এক মাস ধরে মানুষটা ঘরে বসা। তার আগে এনআরসি নিয়ে গোলমালে বেশ কিছুদিন কাজে বেরোতে পারেনি ও। পর্যটনের মরসুমে কিছুই আয় করতে পারেনি। এই সময়টায় পর্যটকরা জেলায় ভিড় করে। কিন্তু রোজগারের সময়টা ঘরে বসেই কেটে গেল আমার স্বামীর।’’ লালবাগের চিনিমহলের বাসিন্দা জুয়েল মাসখানেক আগেও প্রতিদিন সকালে টাঙ্গা নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন হাজারদুয়ারির সামনে। সারাদিন সেখান থেকেই যাত্রী এবং পর্যটকদের নিয়ে বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান দেখিয়ে বেড়াতেন। বাড়িতে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, দুই ছেলে রয়েছে। জুয়েল জানান, ২২ বছর আগে লালবাগে টাঙ্গা চালানো শুরু করেন। সেই সময় টাঙ্গার কদরও ছিল। আস্তে আস্তে সেই কদর কমতে থাকে। তবুও নয় নয় করে সারাদিনে মন্দ রোজগার হত না তাঁর। কিন্তু করোনা আতঙ্কে দেশজুড়ে ডাকা লকডাউনে তাঁর সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে।
জুয়েলের দাবি, ঘোড়ার খাবার কিনতে প্রতিদিন প্রায় দেড়শো টাকা খরচ হয় তাঁর। একমাস রোজগার বন্ধ। সঞ্চয় ভেঙেই চলছে। বলেন, ‘‘মুদির দোকানও আর ধার দিতে চাইছে না। সরকারি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়েছে। তবে এ ভাবে আর বেশিদিন টানতে পারব না। ভাবছি, ঘোড়াটাকে কাউকে দিয়েই দেব।’’