সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
সারা রাত ধরে পেটে ব্যথা। সাতসকালে ইমামনগর থেকে তিন কিমি পথ উজিয়ে অর্জুনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেলিনা বিবিকে নিয়ে ছুটে এসেছিলেন তাঁর বাড়ির লোক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তারবাবু তাঁকে পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। দু’দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন সেলিনা। ওই মহিলার বাডির লোক বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস, হাতের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। নইলে লকডাউনে যে কোথায় যেতাম!’’
একই সুর স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। প্রায় সকলেই বলছেন, জ্বর-জারির মতো সাধারণ অসুখ তো বটেই, সমস্যা একটু গুরুতর হলেও তাঁরা অর্জুনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসার ওপরেই ভরসা রাখেন। গত দেড় মাস লকডাউন চলাকালীন তাঁদের আরও ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় সূত্রে খবর, আগে প্রতিদিন দু’ থেকে আড়াইশো রোগী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতেন। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচশোয়। ফরাক্কার অর্জুনপুর, ইমামনগর, শিবনগর, নয়নসুখ, আমতলা, গগনপাহাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। মূলত বিড়িশ্রমিক ও রাজমিস্ত্রি অধ্যুষিত এই গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় সকলেই দুঃস্থ। দূরের হাসপাতালে যাতায়াতের পথ-খরচ বহন করাই অনেকের পক্ষে কষ্টকর। অর্জুনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাছাকাছি থাকায় তাঁদের সেই অসুবিধে দূর হয়েছে। চারজন স্থায়ী চিকিসক, সাতজন নার্স ও ২০ জনেরও বেশি অস্থায়ী স্টাফ, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট রয়েছেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবায় খুশি সাধারণ মানুষ। বল্লালপুরের সাগর শেখ বলেন, ‘‘গত শুক্রবার রাতে আমার মেয়ের রক্তবমি শুরু হয়। ওই রাতে কোথায় নিয়ে যাব! যানবাহন সব বন্ধ। অর্জুনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসি। এখানকার ডাক্তারবাবুর ওষুধ খেয়ে মেয়ে এখন সুস্থ।’’
হাসপাতালের চিকিৎসক হাসানুর হাসিন বললেন, ‘‘প্রতিদিন শয়ে শয়ে রোগী আসেন। আমরা যথাসাধ্য পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।খুব প্রয়োজন না হলে অন্য হাসপাতালে রেফার করি না।’’ স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য মহসিনা খাতুন বলেন, ‘‘স্বাস্থকেন্দ্র যে ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়।’’