আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এলাকার মানুষের। এর প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভ চলল বৃহস্পতিবার। শান্তিপুর বেলঘড়িয়াতে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
চার দিন ধরে রঘুনাথপুর হিজুলি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি কোয়রান্টিন সেন্টারে পরিযায়ী শ্রমিকরা খাবার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শ্রমিকদের বাড়ির লোককে কোয়রান্টিন সেন্টারে গিয়ে খাবার দিয়ে আসতে বলা হয়েছে। হয় বাড়ির লোক, নয়তো এলাকার বাসিন্দারাই ওই দুই কোয়রান্টিন সেন্টারে থাকা শ্রমিকদের খাবার দিচ্ছেন।
এক শ্রমিক ফোনে বলেন, “আমরা গরিব। সেই কারণে অতিরিক্ত আয়ের জন্য ভিন্ রাজ্যে যেতে হয়েছিল। সেখানে কাজ হারিয়ে কার্যত নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এর পর বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হয়।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজের সুবাদে রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের রঘুনাথপুর হিজুলি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছিলেন। লকডাউনের কারণে তাঁরা কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের কাছে যে টাকা ছিল তা শেষ করে তাঁরা অনেকেই এলাকায় ফিরেছেন। কয়েকদিন আগে তাঁরা এলাকায় ফিরে বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। রঘুনাথপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন চার পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের দু’জন মহারাষ্ট্র থেকে এসেছেন। বাকি দু’জন কেরল থেকে ফিরেছেন। তাঁরা সেখানে নির্মাণ কর্মীর কাজ করতেন।
মহারাষ্ট্র ফেরত যুবকরা জানিয়েছেন, গত ১ জুন তাঁরা ট্রেনে ডানকুনিতে নামেন। সেখান থেকে বাসে হরিণঘাটা থানার জাগুলিতে আসেন। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁরা এলাকায় ফিরে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই থেকে সরকার থেকে তাঁরা এখনও কোনও খাবার পাননি। বাড়ির লোক খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।
একই ভাবে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের হালালপুর পঞ্চানন বিদ্যাপীঠে এক দম্পতি-সহ ছ’জন পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের চারজন গুজরাত এবং বাকি দু’জন ওড়িশা থেকে ফিরেছেন। তাঁরাও সরকার থেকে কোনও খাবার পাচ্ছেন না। তাঁরা জানিয়েছেন, এলাকার মানুষ তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন দেব বলেন, “আমরা শ্রমিকদের ওই বিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছি। সরকার থেকে তারা কোনও খাবার পাচ্ছেন না। সেই কারণে এলাকার লোকজনই তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।”
রঘুনাথপুর হিজুলি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়প্রকাশ লস্কর বলেন, ‘‘বঙ্কিমনগর হাইস্কুলে প্রধান কোয়রান্টিন সেন্টার খোলা হয়েছে। রঘুনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাউকে রাখার ব্যবস্থা নেই। একজনই সেখানে জোর করে আছেন।’’
রানাঘাট ২ নম্বরের বিডিও খোকন বর্মন বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকরা খাবার পাচ্ছেন না, এমন খবর আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’’