ফাইল চিত্র।
রবিবার রাতে তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যুর খবর পেয়েই খোঁজ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সরকারি টুইটারে শোকজ্ঞাপন করে মুখ্যমন্ত্রী লিখলেন— ‘অতিমারির সময়ে প্রথম সারিতে থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কোভিড ১৯ যোদ্ধা হিসেবে গৃহীত দায়িত্ব পালন করেছেন এই নিষ্ঠাবান ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসার।’
কোভিড আক্রান্ত হয়ে নওদার বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র দাসের মৃত্যুর পরে, তাঁর সহকর্মী থেকে স্থানীয় মানুষজন সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করছেন, কাজ ছাড়া বুঝত না কিছুই মানুষটা। কোভিড-ভয়ে জড়সড় হয়ে না থেকে যে কোনও দায়িত্ব সামলাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সব সময়েই। তাঁর শরীরে যে সংক্রমণ দানা বেঁধেছে তাকে আমলই দেননি। তাঁর সহকর্মীদের অনেকেই বলছেন, করোনা যোদ্ধা হিসেবে প্রথম সারিতে থেকে কাজ করতে গিয়ে যে ভাবে করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন হুগলির চন্দননগরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়, কৃষ্ণচন্দ্রের সংক্রমণ ঘটেছিল ঠিক সে ভাবেই।
২০১৮ সালের ৩০ অগস্ট নওদার বিডিও হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের দাঁড়িয়ে থেকে পরিচর্যা করেছিলেন যে মানুষটি, স্কুল বাড়ির কোয়রান্টিন সেন্টারের ব্যবস্থা করা থেকে আক্রান্ত পরিবারকে কনটেনমেন্ট জ়োনে তুলে আনা, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া— দিনরাত এক করে দায় সামলেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। সেই সময়ে সহকর্মীরা তাঁর অসুস্থতার জন্য বার বার তাঁকে বাড়ি পাঠানোর কথা বললেও ফিরে পেয়েছেন উত্তর— ‘না না এ ভাবে ফেলে রেখে চলে যাব, তা হয় নাকি!’
দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড সুগার, উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা, হাঁপানি, নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। বছর দশেক আগে, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর। নিজের পাঁচ মিশেলি অসুস্থতা সত্ত্বেও কর্তব্যে ঢিলে দিতে কেউ দেখেননি তাঁকে।
অগস্টের প্রথম সপ্তাহে তাঁর জ্বর, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ৬ অগস্ট স্থানীয় আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে লালারস সংগ্রহের পর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা করানো হয়। ৮ অগস্ট জানা যায় তিনি করোনা পজ়িটিভ। একাধিক উপসর্গ থাকায় এবং তাঁকে বহরমপুরের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে একদিন পর ৯ অগস্ট তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থান্তরিত করা হয়।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল, রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও বেড়ে গিয়েছিল। চার দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর রবিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র দাস রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক নাবালক ছেলেকে। পিডিও (পঞ্চায়েত ডেভলপমেন্ট অফিসার) হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করলেও পদোন্নতি হয়ে ২০১৫ সালে ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) আধিকারিক হন তিনি।