বন্ধ ইদগাহ। নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার লকডাউন আর নিম্নচাপের দুপুরে বৃষ্টি মাথায় নদিয়ার ধুবুলিয়ার সোনডাঙার মানিকতলা পাড়ায় ইদগাহের সামনে পৌঁছনো গেল। দেখা গেল, ইদগাহের গেটে তালা ঝুলছে। ভিতরের মাঠ জনশূন্য। বড় বড় ঘাসে ভরা। অথচ, এখানেই বৃহস্পতিবার মহরমের মাতম হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে এ বার সে সব স্থগিত রয়েছে।
ফি-বছর এই মাতমের দিনে ইদগাহে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের ভিড় হয়। অন্য বার এই দিনটিতে এলাকার প্রায় আট-দশটি জারি গানের দল সারা দিন জারি গান পরিবেশন করে ইদগাহের মাঠে। সামনেই সোনডাঙা হাইস্কুলের মাঠে পাঁচ দিনের মহরমের মেলার উদ্বোধন হয় মাতমের দিন থেকেই। পুরো ব্যবস্থা পরিচালনা করে স্থানীয় জুবিলি ক্লাব। ক্লাবের পক্ষ থেকে মাতমের দিন ইদগাহে আসা সমস্ত মানুষকে চালের রুটি আর মুরগির মাংস খাওয়ানো হয়। রাতে হয় জারি গানের প্রতিযোগিতা। মহরমের দিন মেলার মাঠে হয় লাঠি খেলার প্রতিযোগিতা। নদিয়া ও আশপাশের জেলা থেকে প্রায় ৩০টির মতো দল এই দুই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
কিন্তু এ বছর এ সব কিছুই হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির কারণে মহরমের সমস্ত অনুষ্ঠান এই বছর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। অন্য বছর এই দিনে মেলার মাঠে যেখানে নানা জিনিসের দোকান আর মানুষের ভিড়ে পা ফেলা দায় হয়ে ওঠে, এ বছর সেই মেলার মাঠ বৃষ্টির জল জমে পুকুরের চেহারা নিয়েছে। মানুষের জায়গায় সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজহাঁসের দল।
ক্লাবের সম্পাদক সোলেমান শেখ বলেন, ‘‘এলাকার বিশিষ্ট মানুষ, প্রশাসন আর ক্লাব সদস্যদের পরামর্শ মতো আমরা যে শুধু মহরমের সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছি তাই নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ঘরে মহরম পালন করার বার্তা দিচ্ছি। পাশাপাশি, মাস্ক বিতরণ করছি।’’
ক্লাবের সদস্য ৮৪ বছরের প্রবীণ আনোয়ার গাইন বলেন, ‘‘এই মেলার শুরু সেই ইংরেজ আমল থেকে। তখন গ্রামের মানুষই মেলার আয়োজন করত ছোট করে। ১৯৬৮ সালে ক্লাব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ক্লাব মেলার দায়িত্ব নিয়েছে। জ্ঞান হওয়া থেকে এই মেলা দেখে আসছি। এই প্রথম এই মেলা বন্ধ হল।’’
মেলা বন্ধ বলে এলাকার মানুষের মনখারাপ। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিচার করে অনুষ্ঠান বন্ধের এই ভাবনাকে সমর্থন জানিয়েছে সকলেই। সাত বছর ধরে মেলার মাঠে জারি গানের প্রতিযোগিতায় দল নিয়ে আসা সফিকুল মণ্ডল কিংবা ৩০ বছর ধরে মেলায় লাঠি খেলা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাহাদুরপুরের দলের আব্দুল আমিন শেখ সকলেই মানছেন, এবার এর প্রয়োজন ছিল।
আব্দুল যেমন বললেন, ‘‘ইদের পর থেকেই প্রতিযোগিতার জন্য দলকে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরিস্থিতি যখন যেমন, সেটা তো মেনে নিতেই হবে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)