ছবি: পিটিআই।
এত দিন যা আশঙ্কা ছিল শুক্রবার তা সত্যি হল!
মুর্শিদাবাদের সালার ব্লকের ভূষণ্ডা গ্রামের মধ্যসত্তরের এক বৃদ্ধের রক্ত ও লালারস পরীক্ষার পরে কোভিড-১৯’এ সংক্রমণ স্পষ্ট হল।
জেলার প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই রোগীকে শুক্রবার কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। কি করে তাঁর করোনাভাইরাসের সক্রমণ ঘটল তা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন চিকিৎসকেরা। তবে, হাসপাতাল এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে গ্রামে ফেরার দিন কয়েকের মধ্যেই তাঁর কাসি শুরু হয়। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। রক্ত পরীক্ষায় তাঁর রক্তে করোনাভাইরাসের প্রমাণ মিলেছে।
আরও পড়ুন: কলকাতা-হাওড়ায় সশস্ত্র পুলিশকে রাস্তায় নামানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
সংক্রমণের খবর আসতেই তড়িঘরি ওই বৃদ্ধের পরিবারের ১৪ জনকে সালারে একটি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অন্য দিকে ওই বৃদ্ধের দুই ছেলে এবং যে গাড়িতে দিন কয়েক আগে তিনি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তাঁদেরও কলকাতায় ঠাকুরপুকুরের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। খোঁজ চলেছে, এর মধ্যে বাড়ি ছাড়াও গ্রামের আর কে তাঁর সংস্পর্ষে এসেছিলেন তার খোঁজ চলছে। জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধ ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। মাঝে মধ্যে কলকাতায় চিকিতসা করাতে যেতেন। দিন কয়েক আগে তিনি কলকাতায় ঠাকুরপুকুরে ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। সেখানেই পরীক্ষাতে ধরা পড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা।’’ ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাঁদের কোয়রান্টিন কেন্দ্র নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তাঁর চার ছেলের মধ্যে তিন জন দিল্লিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁরা মাস দেড়েক আগে গ্রামের বাড়ি ফিরেছেন। অন্য এক ছেলে মাস তিনেক আগে সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন। এ ছাড়া ওই বৃদ্ধ মাঝে মধ্যে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতেন। গত ৩১ মার্চ ওই বৃদ্ধ একটি গাড়ি করে সালার থেকে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। সে দিন দিনভর পিজি হাসপাতালে থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে গ্রামে ফেরেন। তার পরেই ১৪ এপ্রিল ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে। এর পরে শুক্রবার সকালে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, কলকাতায় ওই সরকারি হাসপাতালে করোনা-আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন ওই বৃদ্ধ। যার জেরে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন বলে সন্দেহ।
আরও পড়ুন: রাজারহাটে মৃত্যু কোভিড আক্রান্ত ক্যানসার রোগীর, আতঙ্ক হাসপাতালে
এর পরেই শুক্রবার দুপুরে ভরতপুর ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, সালার থানার পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে ওই বৃদ্ধের পরিবারের ছয় শিশু, পাঁচ মহিলা-সহ মোট ১৩ জনকে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে যান। কান্দির মহকুমাশাসক রবি আগরওয়াল বলেন, “ওই বৃদ্ধের পরিবারের লোকজনকে প্রায় জোর করেই তুলে আনা হয়েছে কোয়রান্টিন সেন্টারে। তাঁদের উপরে আপাতত ১৪ দিন নজরদারি চালানো হবে।”