নতুন বাজার এলাকায় করোনা রোগী ধরা পড়ার পরে এলাকায় পুরসভার কর্মীরা জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন। শুক্রবার, কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
আগেই করোনা ধরা পড়েছিল এক কনস্টেবল এবং এক সাব-ইন্সপেক্টরের। এ বার এক ধাক্কায় ছ’জন গাড়িচালকেরও করোনা ধরা পড়ল নাকাশিপাড়া থানায়। এখনও বেশ কিছু জনের করোনা পরীক্ষর রিপোর্ট আসা বাকি। যদিও থানায় আনোগোনা পুরোপুরি বন্ধ করা হবে কি না সে বি,য়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি জেলা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতেই নাকাশিপাড়ার ওই গাড়িচালকেদর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সেই সঙ্গে এক স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবারের আট জন এবং আরও দুই স্থানীয় বাসিন্দা মিলিয়ে এক দিনে ২৬ জনের করোন ধরা পড়েছে শুধু নাকাশিপাড়াতেই। গোটা জেলায় সব মিলিয়ে নতুন করে সংক্রমমিত হয়েছেন ৪৩ জন। ছ’জন গাড়িচালককে আপাতত বাহাদুরপুর ‘নিরাপদ বাড়ি’তে (সেফ হোম) পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। নিয়মমাফিক নাকাশিপাড়া থানার আবাসনকে ‘কনটেনমেণ্ট জ়োন’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। থানা চত্বর ও পুলিশের সব গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এর আগে এক কনস্টেবলের করোনা ধরা পড়ার পরে নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ ও অন্য নানা কর্মী মিলিয়ে ৯০ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল। দিন দুই আগে এক সাব-ইনস্পেক্টরের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তার পরে ছয় চালকেরও সংক্রমম ধরা পড়ল। এখনও সব কর্মীর রিপোর্ট এসে পৌছয়নি। ফলে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা থেকেই গিয়েছে। এলাকার মানুষের পক্ষে কতটা নিরাপদ ওই থানা, সেই প্রশ্নও উঠছে। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে থানায় গিয়ে তাঁরা সংক্রমিত হতে পরেন, এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ কিছু জায়গায় সংক্রমণের জেরে থানা ভবন বন্দ করে দেওয়া হয়েছে। তার বাইরে অস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ডায়েরি বা অভিযোগ নেওয়া থেকে সুরু করে সব রকম জরুরি কজকর্ম চালানো হচ্ছে। নাকাশিপাড়া থানার ক্ষেত্রেও কি তেমনটা ঘটতে পারে? শুক্রবার বিকেলে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (গ্রামীণ) কৃশাণু রায় বলেন, "তেমন কোনও পরিকল্পনা এখনও নেই। খবর পাওয়ার পরেই থানা চত্বর জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। সকলকে মাস্ক পরে আসতে বলা হচ্ছে।"
নাকাশিপাড়া থানায় মোট আট জন গাড়িচালক কাজ করতেন। ছ’জনকে বাদ দিলে যে দু’জন পড়ে থাকেন, তাঁদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। যদি তাঁরা সংক্রমিত না-ও হন, তাঁদের দু’জনের পক্ষে টহলে যাওয়া থেকে শুরু করে সব দিক সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। থানা সূত্রের খবর, আপাতত কাজ চালানোর জন্য জেলা থেকে দু’জন চালককে পাঠানো হয়েছে। যাঁদের একান্ত প্রয়োজন কেবল তাঁদেরই থানার ভিতরে আসতে দেওয়া হচ্ছে। থানায় ঢোকার আগে থার্মাল চেকিং ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে জেলা স্বাস্থ্য দফতর নাকাশিপাড়ায় যে ১৬ জনের সংক্রমণের কথা জানিয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা থেকে বেথুয়াডহরি ২ পঞ্চায়েত এলাকায় ফেরা দু’জন রয়েছেন। আর রয়েছেন মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের কুবেরনগর এলাকায় একই পরিবারের আট জন। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, ওই বাড়ির এক মহিলা এএনএম হিসেবে কাজ করেন। তাঁর সূত্রেই গোটা পরিবার সংক্রমিত হযে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাড়িটিকে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পরিবারের আট জনের কারও কোনও উপসর্গ না থাকায় বাড়িতে রেখেই তাঁদের দেখভাল করা হচ্ছে। পরিবারটির সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন এমন লোকজনের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)