—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP
ভোটের সময় থেকে লকডাউনের সময়, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিতর্ক উঠেছে চরমে। শাসক দলের বিরুদ্ধে পরিযায়ীদের বঞ্চনা নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। এ বার সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যই বাজেটে দেড়শো কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। ফলে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা এই সরকারের পাশে থাকবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও তৃণমূল নেতাদের দাবি, তাঁদের সরকার সব সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে আছে। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর পরিযায়ীদের নিয়ে একাধিক পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গিয়েছেন। তা ছাড়া এই জেলায় তৈরি করা হয়েছে শ্রমিক ভবন। যেখান থেকেও পরিযায়ী শ্রমিকরা নানারকম সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে সেখানে বলেছেন তিনি। তা ছাড়াও মুর্শিদাবাদে এসে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতিটি জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি বোর্ড তৈরি করা হবে। যে বোর্ডের মুখ্য দায়িত্ব সামলাবেন সাংসদ সমীরুল ইসলাম।
যদিও এই বাজেটকে নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, লোকসভা ভোটের আগে নতুন করে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে নাটক শুরু করেছে সরকার। এর আগেও শ্রমিকদের কল্যাণের নামে একাধিক প্রকল্প এনে বোকা বানানো হয়েছে তাদের। সেই সব প্রকল্প থেকে কোনও রকমের সুবিধা পায়নি তারা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলছেন, "গোটা বাজেটটাই হচ্ছে ভোটমুখী বাজেট। আদতে শ্রমিকদের কল্যাণে কিছুই করা হচ্ছে না। যে সরকারের মুখ্যমন্ত্রী করোনার সময় শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরার সময় ট্রেনের নাম দিয়েছিল করোনা এক্সপ্রেস। তার এখন দরদ উথলে পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য। গোটটাই লোক দেখানো এবং পরিযায়ীদের ভোট পাওয়ার আশায়।’’
জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকারের দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রথম থেকেই শ্রমিকদের নিয়ে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার সুফল ইতিমধ্যেই রাজ্যের শ্রমিকরা পাচ্ছেন। নতুন বাজেটে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তার ফলে গোটা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা খুবই উপকৃত হবেন। বিরোধীদের কেবল বিরোধিতা করতে হবে তাই এমনটা বলছে।"
পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিন্ রাজ্যে গিয়ে জখম হলে তার চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় পরিবারকে। এমনকি কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে দেহ ফেরানো নিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় পরিযায়ীর পরিবারকে। কিন্তু সরকারের নতুন পরিকল্পনার ফলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে দাবি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। কারণ যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তার বড় একটা অংশ স্বাস্থ্য খাতেই ব্যয় করা হবে।
ডোমকলের কুপিলা গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আনসারির দাবি, ‘‘বছর দেড়েক আগে আমার এক ভাই কেরলে নির্মাণ কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে জখম হয়েছিল। তাকে নিয়ে যে কী বিপাকে পড়েছিলাম, বলে বোঝাতে পারবো না। এমন সুবিধা সত্যি সত্যি যদি পরিযায়ী শ্রমিক পায়, তা হলে বড় একটা অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি মিলবে পরিযায়ী শ্রমিকদের।’’
কিন্তু বাস্তবে সেই সুবিধা কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়েছে শ্রমিকদের মনে।
ইতিমধ্যে দুয়ারে সরকারে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
সেই সময়েই এ দিন বাজেটে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার ফলে নতুন করে আসার আলো দেখছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা ও তাঁদের পরিবার।