গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সীমান্তের এ পারে দিব্যি কাজ করে বাংলাদেশি সিমকার্ড। ও পারেও তা-ই। সীমান্ত পেরোলেও ভারতীয় নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েই দিনে দিনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়ছে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। সবই জানেন বিএসএফের তদন্তকারীরা। কিন্তু সব জেনেও তাঁদের হাত-পা কার্যত বাঁধা। কোনও ভাবেই দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নজরে রাখা যাচ্ছে না!
মুর্শিদাবাদ থেকে নদিয়া— প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার আত্মর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে জলপথ প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা। এর মধ্যে কাঁটাতার নেই প্রায় ২০ শতাংশ জায়গায়। বিএসএফ সূত্রে খবর, কাঁটাতারহীন ওই সব এলাকাই অপরাধচক্রের স্বর্গরাজ্য। সেখানে অন্য দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বা তথ্য আদানপ্রদান করে থাকে দুই দেশের দুষ্কৃতীরা।
বিএসএফের সাইবার বিভাগের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের একাধিক মোবাইল পরিষেবা দেওয়া সংস্থার সিগন্যাল কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। মোবাইলের ‘সেটিংস’-এ ‘ম্যানুয়াল নেটওয়ার্ক’-এ গেলেই বাংলাদেশি সিগন্যাল বেছে নেওয়া যায়। মোবাইলে বাংলাদেশি সিমকার্ড থাকলেই করা যায় তা। এ পারের দুষ্কৃতীরা মোবাইল নেটওয়ার্কের এই সুবিধা কাজে লাগায়। একই ভাবে ও পারের দুষ্কৃতীরাও ভারতীয় সিমকার্ড ব্যবহার করে এ পারে আত্মগোপন করে থাকে। চোরাকারবারিদের মাধ্যমেই এ পারের সিমকার্ড ও পারে আর ও পারের সিমকার্ড এ পারে আসে। দু’দেশের দুষ্কৃতীরা ভিন্দেশি সিমকার্ড ব্যবহার করায় তাদের গতিবিধি নজরে রাখতে যে হিমশিম খেতে হয় সাইবার গোয়েন্দাদের, সে কথা মেনেও নিয়েছেন বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এনকে পাণ্ডে। তাঁর কথায়, ‘‘সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী অপরাধীদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে যথেষ্ট সমস্যা হয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটা এক ধরনের বাধা।’’
সাইবার বিশেষজ্ঞ অমলকান্তি চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘অন্য দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করা অসুবিধাজনক। বিএসএফ বা গোয়েন্দাদের কাছে সেই পরিকাঠামো না-থাকারই কথা। ফলে এর সুযোগ নেয় অপরাধীরা। নিজেদের মধ্যে তারা তথ্য আদানপ্রদান করে। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ পারের অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মগজধোলাইও করা হয়। এ ভাবেই তো সীমান্তের গ্রামগুলিতে জঙ্গি সংগঠনের জাল ছড়িয়ে পড়ে। সব কিছু জেনেও নির্বাক গোয়েন্দারা। এটা দু’দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’’
এই সমস্যা সমাধানের কোনও উপায় আছে কি? মোবাইল নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়ের বক্তব্য, ‘‘সীমান্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের ‘ফ্রিকোয়েন্সি লেভেল’ (তরঙ্গদৈর্ঘ্য) যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখতে পারলে ওই সমস্যা দূর করা যাবে।’’
যদিও এ ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। পরিষেবা প্রদানকারী একটি বহুজাতিক সংস্থার ম্যানেজার সুমন মণ্ডল বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দিলে সাধারণ মানুষই ফোনে নেটওয়ার্ক পাবেন না। তাই ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে রাখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’’