প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্ব-বিরোধ কিছুতেই যেন থামছে না করিমপুরে। নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সাংসদদের চেয়ারম্যান পদ থেকে আগেই সরানো হয়েছিল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়কে। এ বারে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকেও তাঁকে সরানো হয়েছে। ফলে আরও এক বার দলের অন্দরের গোষ্ঠী-কোন্দল প্রসঙ্গ প্রবল ভাবে সামনে চলে এসেছে।
করিমপুরে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র শিবির বনাম বিমলেন্দু সিংহ রায়ের শিবিরের ঠাণ্ডা লড়াই বহু চর্চিত। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে গত সোমবার দুই শিবির এক হয়ে ঐক্যের মহা মিছিলের পরেও রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে বিমলেন্দুকে সরানোর ঘটনায় রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে।
করিমপুরে দলের অন্দরের সমস্যার দিকে নজর দিতেই সুব্রত বক্সী বৈঠক করেছিলেন। তাঁর নির্দেশমতো গত সোমবার করিমপুর বিধানসভার ২ ব্লকের দু’টি জায়গায় মহুয়া মৈত্র ও বিমলেন্দু সিংহ রায় পাশাপাশি হেঁটে ঐক্যের বার্তা দিতে মিছিল করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতে করিমপুর হাসপাতাল থেকে বিমলেন্দু সিংহ রায়কে সরানো নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। যদিও তৃণমূলের করিমপুর ১ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি তরুণ সাহা বলেন, ‘‘বিমলেন্দুকে সরানোর পিছনে দলের গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয় থাকতেই পারে না। এটা রাজ্য সরকারের বিষয়।’’
২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিমলেন্দু সিংহ রায় তৃণমূলের টিকিটে জয় পেয়ে বিধায়ক হন। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও নতিডাঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। গত অগস্ট মাসে নতিডাঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে বাদ দিয়ে মহুয়া মৈত্রকে আনা হয়। তার পরেই নদিয়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে বিমলেন্দু সিংহ রায়কে অপসারণ করে জেলাশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বার করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবেও বিমলেন্দুকে বাদ দিয়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভার সংসদ আবু তাহের খানের নাম ঘোষণা করা হল।
তৃণমূলের করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রাক্তন সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘কাউকে সরানোর পিছনে কারণ কী তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। বিধায়কের মতো কোনও ব্যক্তিত্বকে বার-বার বিভিন্ন পদ থেকে সরানো হলে দলের সাধারণ স্তরের কর্মীরা ধন্দের মধ্যে পড়েন। সাধারণ মানুষকেও কারণ বোঝানো যাচ্ছে না।’’
আর বিমলেন্দু সিংহ রায়ের উক্তি, ‘‘আমাকে কী কারণে সরানো হয়েছে আমি জানি না। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারি নির্দেশিকার কথা জেনে ভীষণ অবাক হয়েছি।’’ অন্য দিকে নতুন দায়িত্ব পেয়ে আবু তাহের খান বলেন, ‘‘করিমপুর এলাকায় আমাকে আরও বেশি করে সময় দিতে হবে।’’
গত বুধবার করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক ছিল। সেখানে বিধায়ক ও তাঁর প্রতিনিধি আশিস কুমার চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও সুপার ও অন্য আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শেষ লগ্নে হাসপাতালের পেছনের দিকে রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দাদের রাস্তার দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই বিতর্ক শুরু হয়।
বিধায়কের প্রতিনিধি আশিস কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, রামকৃষ্ণ পল্লীর বাসিন্দারা হাসপাতালের একাংশ দিয়ে করিমপুর বাজারের দিকে আসা-যাওয়া করতেন। বছর আড়াই আগে পাঁচিল দিয়ে ওই রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের রাস্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ঠিক তার পরের দিন বিধায়ককে হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পর থেকে সরিয়ে দেয়া হল। হাসপাতালের ওই বিতর্কের সঙ্গে এর যোগ আছে কিনা, আমার জানা নেই।’’
করিমপুর হাসপাতালে সুপার মনীষা মণ্ডল বুধবারের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক সম্পর্কে বলেন, ‘‘সে দিনের বৈঠকে আমার সামনে কোনও বিতর্ক হয়নি। অন্য কোথাও কিছু হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই।’’