Gold Coin

স্বর্ণমুদ্রার ইতিহাস এখনও অধরা

পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই মুদ্রাগুলি পাওয়ার পরে তাই ভাগীরথীর ধারে ওই এলাকা গুপ্তযুগের একটি বড় নগর বা বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে অনুমান করা যায়।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৪
Share:

ফাইল চিত্র।

পুরোদমে চলছে তখন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ। সাগরদিঘি লাগোয়া গণকরের ঢিবি কেটে ট্রাকে করে এনে ফেলা হচ্ছে মাটি আহিরণ সেতুর কাছে রাস্তা গড়তে। হঠাতই এলাকার দু’চার জনের নজরে আসে মাটির ভিতরে কী যেন চক চক করছে। খানিক পরেই বোঝা গেল, তা পুরনো আমলের স্বর্ণমুদ্রা। ২০১৩ সালের ৩১ মে’র সেই সকালে সড়ক নির্মাণ সংস্থার সেকসন অফিসার রজনীকান্ত মহাপাত্র বলছেন, “মনে থাকবে না, সেই দিনটা! যখন শুনলাম স্বর্ণমুদ্রা পাওয়ার কথা তখন আর কিছুই করার ছিল না। কয়েক হাজার মানুষ সেদিন আহিরণের রাস্তায় নেমে পড়েছিল স্বর্ণমুদ্রার খোঁজে।” শেষ পর্যন্ত রাতভর তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছিল ১১টি স্বর্ণমুদ্রা। ওজন ৯ ভরি মত।

Advertisement

আহিরণে ছুটে আসেন তৎকালীন রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্তা অমল রায়। তিনি জানিয়ে দেন, “ স্বর্ণমুদ্রাগুলি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের প্রচলিত স্বর্ণমুদ্রা। পঞ্চম শতকের পুরাতন এই মুদ্রাগুলি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য বস্তু হিসেবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।

কী সেই তাৎপর্য? ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত জানান, এই অঞ্চলের নতুন করে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই এলাকার কাছেই শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ। বড়ঞার ঢেকাতেও পাওয়া গিয়েছে কাছাকাছি সময়ের প্রত্ন নিদর্শন।

Advertisement

পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই মুদ্রাগুলি পাওয়ার পরে তাই ভাগীরথীর ধারে ওই এলাকা গুপ্তযুগের একটি বড় নগর বা বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে অনুমান করা যায়। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মনে হয়েছে মুদ্রাগুলি প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের। তাই দীর্ঘ কাল ধরেই এই মুদ্রাগুলি এই এলাকায় প্রচলিত ছিল। মুদ্রাগুলিতে উৎকীর্ণ ধনুকপাণি রাজার বিপরীতে রয়েছেন যে নারী, তিনি মহিষীও হতে পারেন। এই ধরনের রাজা-রানি উৎকীর্ণ করা মুদ্রা প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলেই হওয়া সম্ভব। এখানে ‘চন্দ্র’ কথাটাও রয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ‘শ্রীবিক্রমঃ’ কথাটাও উৎকীর্ণ রয়েছে। তা থেকে আবার মনে হয় এই মুদ্রা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের। তবে সেই ক্ষেত্রে গুপ্তযুগের মুদ্রা সম্ভারে এটি একটি নতুন সংযোজন।

জিয়াগঞ্জ মিউজ়িয়ামের কর্তা মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তায় এই স্বর্ণমুদ্রা মেলার পরই রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতর ঘোষণা করে, উৎখনন করা হবে গণকরের সেই মাটির ঢিবি, যেখানকার মাটি থেকেই মিলেছিল স্বর্ণমুদ্রার খোঁজ। কিন্তু আজও সে খননের কাজ শুরু হয়নি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement