কংগ্রেসের দেওয়াল লিখনে সিপিএম প্রার্থীর নাম। — নিজস্ব চিত্র
দল নয়, সূর্যবাবুর কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে কংগ্রেসও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের সুরেই তারাও এ বার বলছে শুরু করেছে— আগে দল নয়, আগে জোট।
জঙ্গিপুরের পরে মুর্শিদাবাদের বড়ঞাও সে পথেই হাঁটছে। শুক্রবার, সেখানেও দলীয় প্রার্থীর নাম লিখে কংগ্রেসের সমর্থকেরা বলছেন, ‘‘উনি কংগ্রেস নন, জোট প্রার্থী।’’
বাম শরিকেরা অবশ্য সে পথে হাঁটেনি। তাদের ঘোষিত সিদ্ধান্ত, দলের ‘অস্তিত্ব’ রাখতে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেবেন তারা। দিন কয়েক আগে বিনয় সরকারকে প্রার্থী করে নিজেদের জেদ বজায় রেখেছে আরএসপি। ইতিমধ্যেই তাঁর নামে দেওয়াল লিখনও শুরু হয়েছে।
বড়ঞা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই আরএসপি-র পুরনো ঘাঁটি। হিসেবটা বদলে গিয়েছিল গত বিধানসভা নির্বাচনে। জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রতিমা রজক। কংগ্রেসের বড়ঞা দাবি সেই সূত্রেই।
বিনয় প্রার্থী হলেও তাঁর পাশে অবশ্য নেই সিপিএম। দিন কয়েক আগে জেলা কার্য়ালয়ে এসে শরিক দলের নেতাদের সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়ে দিয়েছিলেন, জোট আগে, শরিকদের অস্তিত্ব বাঁচাতে তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করার জায়গা নেই। আরএসপি-র জেলা নেতাদেরও অনেককে বলতে সোনা গিয়েছে, বামফ্রন্টগত ভাবে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাকেই মান্যতা দেবেন তাঁরা। এ ব্যাপারে সিপিএমের সঙ্গেও প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে আরএসপি-র। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় শরিকের নির্দেশ মেনে জোট প্রার্থীকে তারা সমর্থন করবেন তবে পরিস্থিতি বুঝে।
আরএসপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমরা বামফ্রন্টের প্রার্তীকেই সমর্থন করব। প্রাচারও চলবে তাঁরই নামে। তবে আমরা কখনওই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কিছু বলব না।’’ ভোট যত এগিয়ে আসবে, এলাকার পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে সিদ্ধান্তও বদলে যেতে পারে। বাম নেতাদের অনেকেই বলছেন, ‘‘যদি বুঝি আমরা প্রচার করে গেলে জোট প্রার্থীর জয়ের আশা ক্ষুন্ন হচ্ছে, তাহলে আমরা বসে যাব!’’
জেলা কংগ্রেস নেতারাও বামেদের সেই ‘বসে’ যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের অনেকের মুখেই শোনা গিয়েছে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের দৌড় ওই পর্যন্তই। তাঁজদের অনেকেরই আশা, পরিস্থিতি তৃণমূলের অনুকূলে চলে গেলে বামেরা প্রার্থী সরিয়ে নিতেও পারে।
সিপিএমের বড়ঞা জোনাল কমিটির সম্পাদক আনন্দ ঘোষ বলেন, “আপাতত এখানে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হচ্ছে। সিপিএম বামফ্রন্টের প্রার্থীর হয়েই প্রচার করছে। তবে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছে।’’ বড়ঞা ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি সফিউল ইসলামও বলছেন, ‘‘ভদ্রলোকের এক কথা। আমরাও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। এখনও আমরা বামেদের বিরুদ্ধাচারণ করছি না। জোটেরই জয় হোক চাইছি।’’
তবে জোটের নামে বহু জায়গাতেই কংগ্রেস প্রার্থীর নামের পাশে কংগ্রেস-সিপিএম জোট প্রার্থী লেখায় ক্ষুব্ধা আরএসপি। দেওয়ালে সিপিএমের নাম লেখায় বেজায় চটেছেন প্রার্থী বিনয়ও। বলছেন, ‘‘আমরা বামফ্রন্টগত ভাবে প্রচার করছি, মিটিং করছি, আর কংগ্রেস দেওয়ালে সিপিএমের নাম লিখে প্রচার করে দিল, একটা নীতি বলে ব্যাপার আছে তো!’’
আরএসপি-র স্থানীয় নেতাদের অনেকেরই অনুমান— কংগ্রেস হোক আর জোট, প্রতিমা রজকের জয়ের সম্ভাবনা তেমন নেই বলেই এখন সিপিএমের হাত ধরতে
চাইছে কংগ্রেস। বিনয়ও বলছেন, “এ বার কংগ্রেস ঈর পারবে না। আরএসপি-র কাছে যে হেরে যাবে বুঝতে পেরেই সিপিএমের নাম
লিখে সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করতে চাইছে।’’
যা শুনে প্রতিমাদেবী বলছেন, “জোট তো হয়েছে, সবাই জানে। জানে না শুধু স্থানীয় আরএসপি নেতারা!”