Pond Encroachment

পুকুর ভরাটের প্রতিবাদ, পুরসভার নাম করে ‘হুমকি’

আনন্দের অভিযোগ, পুর এলাকার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়ায় নবদ্বীপ আদালত চত্বরে প্রবেশপথের উল্টো দিকে ত্রিপল দিয়ে আড়াল করে পুকুরের একাংশ ভরাট করে নির্মাণ কাজ চলছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৯
Share:

ত্রিপলে ঢাকা পুকুরের পাড়। নবদ্বীপে। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী যখন জলাজমি ভরাট, সরকারি জমি জবরদখল নিয়ে খড়্গহস্ত, তখন পুকুর ভরাটের অভিযোগ তোলায় নবদ্বীপ পুরসভার নাম করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

বিজেপির নবদ্বীপ দক্ষিণ মণ্ডলের ইনচার্জ তথা নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য আনন্দ দাসের অভিযোগ, নবদ্বীপ আদালতের সামনেই ত্রিপলের আড়ালে একটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ করায় তাঁকে সরাসরি নবদ্বীপ পুরসভা থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আনন্দের অভিযোগ, পুর এলাকার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়ায় নবদ্বীপ আদালত চত্বরে প্রবেশপথের উল্টো দিকে ত্রিপল দিয়ে আড়াল করে পুকুরের একাংশ ভরাট করে নির্মাণ কাজ চলছিল। গত ২৭ জুন তিনি এই নিয়ে নবদ্বীপ থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। যদিও তা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। তবে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার আনন্দ বলেন, “আমার দাবি ছিল, ওই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিয়ে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। পুলিশ এবং ভূমি সংস্কার দফতর তদন্ত করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু অবৈধ নির্মাণ ভেঙে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরানো হয়নি।” উল্টে, গত ২৯ জুন দুপুরে এক জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি আনন্দকে ফোন করে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। আনন্দের অভিযোগ, “আমার মোবাইলে ফোন করে ওই ব্যক্তি নিজেকে নবদ্বীপ পুরসভার পূর্ত বিভাগের আধিকারিক বলে দাবি করেন এবং হুমকির সুরে জানতে চান যে আমি প্রাচীন মায়াপুরের বাসিন্দা হয়ে কেন অনেক দূরের সরকারপাড়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছি? আমি তাঁর নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন যে নাম বলতে তিনি বাধ্য নন। আমায় পুরসভায় গিয়ে দেখা করতেও বলেন।”

Advertisement

আনন্দের প্রশ্ন: তিনি পুলিশ এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন, অথচ তাঁকে পুরসভার পূর্ত বিভাগ থেকে ফোন করে জবাবদিহি জানতে চাওয়া হচ্ছে কেন? তিনি কোন এলাকার বাসিন্দা তার সঙ্গে পুকুর ভরাটের অভিযোগের কী সম্পর্ক? ফোনে সেই কথোপকথন সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে (যদিও আনন্দবাজার তার সত্যতা যাচাই করেনি)। তাতে শোনা যাচ্ছে: ফোনে আনন্দের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, যে এলাকা সম্পর্কে তিনি অভিযোগ করছেন সেখানে কি তাঁর জমি আছে? কার্যত ধমকের সুরে তাঁকে পুরসভায় তলব করা হচ্ছে। আনন্দ পাল্টা প্রশ্ন তুললে কিছুক্ষণ বাদানুবাদের পর ওই ব্যক্তি ফোন কেটে দেন।

এর পর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। প্রথমে নবদ্বীপ থানার আইসিকে ফোন করে এবং সন্ধ্যাবেলায় ওই ‘হুমকি’ ফোনের মোবাইল নম্বর দিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ জানান। এ দিন নবদ্বীপ থানার আইসি জলেশ্বর তিওয়ারি বলেন, “ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।” নবদ্বীপ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নবীন গৌতম বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী, জলাভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখবে মৎস্য দফতর। নবদ্বীপ থানা থেকে অভিযোগ পেয়ে তিন দিন আগেই ওদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওদের রিপোর্টের উপর নির্ভর করে যা করার করা হবে।”

তবে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা এই ঘটনায় পুরসভার কারও যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুরসভার কাছে যে অভিযোগ করা হয়নি তা নিয়ে পুরসভা মাথা ঘামাবে কেন? লোকসভা ভোটে নাস্তানাবুদ হয়ে বিজেপি নেতারা এখন এ সব করে প্রচারে থাকার চেষ্টা করছেন।” যদিও নবদ্বীপ যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে সেই রানাঘাটে প্রায় দু’লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। বিজেপির নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক জীবনকৃষ্ণ সেনের কটাক্ষ, “দেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এখনও নরেন্দ্র মোদী। উনি আসল বিষয় থেকে নজর ঘোরানোর জন্য রাজনৈতিক প্রসঙ্গের অবতারণা করছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement